উজবেকিস্তানের ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্র কেবল একটি জাদুঘর বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নয়, এটি একটি বৃহৎ শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক মেগা প্রকল্প, যার মূল লক্ষ্য হলো ইসলামী সভ্যতার ইতিহাসে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নতুন করে উপস্থাপন করা। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে উজবেকিস্তানের নিজস্ব ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের গভীর অধ্যয়ন সম্ভব হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
উজবেকিস্তানের ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্র কেবল একটি জাদুঘর বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নয়, এটি একটি বৃহৎ শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক মেগা প্রকল্প, যার মূল লক্ষ্য হলো ইসলামী সভ্যতার ইতিহাসে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নতুন করে উপস্থাপন করা। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে উজবেকিস্তানের নিজস্ব ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের গভীর অধ্যয়ন সম্ভব হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা প্রথম উঠে আসে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়য়েভের মন থেকে। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি এই প্রকল্পের দর্শন তুলে ধরেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ হলো বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ইসলামের সত্যিকারের মানবিক ভাবনা ও এর শান্তিপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দেয়া। ইসলাম মানবতার কল্যাণ, শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায় এবং এর মূল শিক্ষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য কাজ করে।
আট বছর পর, এই স্বপ্নের প্রতিফলন হিসেবে নির্মিত হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিকতার মিলনস্থল এই অত্যাধুনিক কেন্দ্র। এটি তাশখন্দের হাস্ত-ইমাম এলাকার অন্তর্গত, যেখানে ৬৫ মিটার উচ্চ গম্বুজ ও চারটি প্রবেশ পথ বিভিন্ন এলাকার ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। কেন্দ্রের মূল অংশে রয়েছে পবিত্র কোরআনের হল, যেখানে সুপ্রাচীন ও Osmanী মুশাফের (কোরআনের পাণ্ডুলিপি) সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব স্মৃতি’ হিসেবে স্বীকৃত।
অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি দ্বারা সমৃদ্ধ এই কেন্দ্রের প্রদর্শনীগুলি ইসলামি সভ্যতার বিভিন্ন যুগের ধারাকে তুলে ধরেছে। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে প্রথম ও দ্বিতীয় রেনেসাঁ, সাম্প্রতিক যুগ ও আধুনিক উজবেকিস্তান—সবকিছুই এখানে একত্রিত হয়েছে।
এখানে রয়েছে ২ লাখ বইয়ের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, ক্যালিগ্রাফি ও হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণাগার, শিশুদের জন্য আলাদা জাদুঘর, যেখানে খেলাধুলা, প্রযুক্তি ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি শেখানো হয়।
আরও থাকছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যালয়, যেমন: ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক ও কালচারাল অর্গানাইজেশন, অক্সফোর্ডের ইসলামিক স্টাডিজ কেন্দ্র প্রভৃতি, যারা গবেষণা ও সংস্কৃতি উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। কেন্দ্রের মধ্যে আছে ৪৬০ আসনের সম্মেলন হল, যেখানে আন্তর্জাতিক আলোচনা ও সহযোগিতা হয়, প্রতিদিনের কার্যক্রমের নিদর্শন ও গবেষণা সংগ্রহের জন্য একটি জীবন্ত সংগ্রহশালা হিসেবে কাজ করে।
বিশেষত, এই কেন্দ্রের অন্যতম লক্ষ্য হলো হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ধ্বংসপ্রাপ্ত বস্তুগুলো পুনরুদ্ধার করা। এর জন্য উজবেকিস্তানের শিল্প ও ইতিহাসবেত্তা ও গবেষকরা বিশ্বের শীর্ষ নিলামঘর, গ্যালারী ও ব্যক্তিগত সংগ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এর ফলে এক হাজারেরও বেশি ঐতিহাসিক ও দুর্লভ নিদর্শন দেশের সংগ্রহে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
উজবেকিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইতিহাস ও নিদর্শন সংরক্ষণে বিশ্বের নানা দেশ ও সংস্থা অবদান রেখেছে। প্রায় এক হাজার পাণ্ডুলিপি ও নিদর্শন দান করেছে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ব্যক্তিগত সংগ্রাহক।
প্রতিদিন এই কেন্দ্রের পরিচালনা ও গবেষণা কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ড. ফিরদাভস আবদুখালিকভ, যিনি কেন্দটির পরিচালক ও চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, দেশের প্রচেষ্টা ও জনগণের সমর্থনে এই আধুনিক কেন্দ্রটি ইসলামী সভ্যতার সেই অনন্য প্রাচীন উচ্চতাকে ফিরিয়ে আনছে, যেখানে শান্তি, জ্ঞানচর্চা ও আধ্যাত্মিকতার পরিবেশ এখনো সমৃদ্ধ। তার ভাষায়, এই মহান প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের দায়িত্ব হলো ঐতিহ্যকে ভবিষ্যতের জন্য আলোকিত শক্তিতে রূপান্তর করা, যেন তা নতুন প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞানের আলো জ্বালাতে পারে।











