লক্ষ্মীপুর জেলার ডাব ও নারিকেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অঞ্চলের সুস্বাদু ডাব এখন শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, দেশের নানা প্রান্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ডাবের উৎকৃষ্ট গুণগত মান, হাইলফলনশীলতা এবং চাহিদা বিবেচনায় এই এলাকায় নারিকেলের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করার জন্য কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। কৃষি বিভাগের এই প্রচেষ্টায় চাষিরাও সফলতার মুখ দেখছেন। চলতি
লক্ষ্মীপুর জেলার ডাব ও নারিকেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অঞ্চলের সুস্বাদু ডাব এখন শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, দেশের নানা প্রান্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ডাবের উৎকৃষ্ট গুণগত মান, হাইলফলনশীলতা এবং চাহিদা বিবেচনায় এই এলাকায় নারিকেলের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করার জন্য কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। কৃষি বিভাগের এই প্রচেষ্টায় চাষিরাও সফলতার মুখ দেখছেন। চলতি বছরেই কৃষি বিভাগ একটি বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যেখানে ৫০ কোটি টাকার ডাব বিক্রি হতে আশা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুরে বর্তমানে পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে নারিকেল চাষ হচ্ছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই জেলায় বছরে প্রায় ২৬ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন নারিকেল উৎপন্ন হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ডাব উৎপাদিত হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তবে বেসরকারি পর্যায়ে এই সংখ্যাক আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুত্র অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরের ডাবের গুণমান ভালো হওয়ায় সারাদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানকার চাষিরা বহু বছর ধরেই গাছের ডাব সরাসরি পাইকারদের কাছ থেকে বিক্রি করে আসছেন। প্রতিটি ডাব খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে, কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ডাব বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়।
জানা যায়, চাষিরা কিছুটা লাভের জন্য এক ডাব শুধুমাত্র ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করেন, তার পরিমাণ ও মানের উপর নির্ভর করে। গাছ থেকে সংগ্রহের খরচ, গাড়ি বা ট্রাকের ভাড়া, গাছে ওঠার জন্য গাছি প্রতি ১০০ টাকা নেওয়া হয়—এসব খরচ বাদ দিয়ে সাধারণত ২০ থেকে ৩০ টাকার মতো লভ্যাংশ থাকে। তবে, এখানকার ডাবের স্বাদ ও মানের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর চাহিদা অপ্রতিরোধ্য।
স্থানীয় ডাব ব্যবসায়ীরা জানান, ডাবের দাম প্রকারভেদে ৭০-৮০ টাকায় কিনে, বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন। তবে ডাবের গাছ থেকে সংগ্রহের পর প্রচুর খরচ হয়—তাঁরা বলেন, গাছে ওঠার জন্য গাছি প্রতি ১০০ টাকা নেন, এছাড়া পরিবহন ও অন্যান্য খরচে যোগ হয়। সব মিলিয়ে, মোকামে বিক্রি শেষে তাদের লাভ হয় মাত্র ২০-৩০ টাকা। কিন্তু ডাবের চাহিদা ও প্রাকৃতিক স্বাদই এ দেশের ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে।
সদর উপজেলার দালাল বাজার এলাকার একজন চাষি তোফায়েল আহমদ বাসসকে জানিয়েছেন, ডাবের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, কম পোকামাকড় ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ থাকলে প্রতি বছরই ফলন ভালো হয়। তিনি এ বছর প্রায় ৫০ হাজার টাকার ডাব বিক্রি করেছেন বলে জানান।
অন্যদিকে, ইউসুফ হোসেন ও নুরুজ্জামান নামে আরও একাধিক কৃষক বলেন, কম বিনিয়ো ও কম রক্ষণাবেক্ষণে নারিকেল চাষের ফলে অনেকেই এখন বেশি ডাব চাষে আগ্রহী। এই এলাকাতে নারিকেল চাষের তুলনায় ডাবের চাহিদা বেশি, ফলে তারা ডাব বিক্রির মাধ্যমে ভালো আয় করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জহির উদ্দিন বলেন, এই জেলার ডাব ও নারিকেল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়—ঢাকা, চট্টগ্রামসহ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি হয়। নারিকেলের পাশাপাশি ডাবের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা আরও বেশি বিক্রি করছেন। এই বছর শুধুমাত্র ডাব বিক্রি থেকেই প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি আয় হওয়ার আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, ডাবের পানি মানবদেহের নানা প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে। বিশেষ করে ডেঙ্গুর প্রকোপের সময় চিকিৎসকেরা রোগীদের জন্য ডাব পান করার পরামর্শ দেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত ডাব খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেন। এই পরিস্থিতির সুযোগে দেশের কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, বলেও যোগ করেন তিনি।











