সরাইলের গ্রী-হাউন্ড কুকুরের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বাজারজাতের উদ্যোগ শুরু

সরাইলের গ্রী-হাউন্ড কুকুরের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বাজারজাতের উদ্যোগ শুরু

সরাইলের ঐতিহ্যবাহী গ্রী-হাউন্ড কুকুরের প্রজনন এবং বাজারজাতকরণে নতুন উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। এই বিরল এবং দামি প্রজাতির কুকুরটি দীর্ঘদিন ধরে সরাইলের অর্থ ও সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে পরিচিত হলেও ভবিষ্যৎ জলজ্যান্ত রাখতে নানা সংকটে পরেছে। বর্তমানে এই কুকুরের সংখ্যা জেলাজুড়ে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারেই দেখা যায়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে, সরাইলের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও প্রজনন সংগ্রহের বিনিময়ে

সরাইলের ঐতিহ্যবাহী গ্রী-হাউন্ড কুকুরের প্রজনন এবং বাজারজাতকরণে নতুন উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। এই বিরল এবং দামি প্রজাতির কুকুরটি দীর্ঘদিন ধরে সরাইলের অর্থ ও সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে পরিচিত হলেও ভবিষ্যৎ জলজ্যান্ত রাখতে নানা সংকটে পরেছে। বর্তমানে এই কুকুরের সংখ্যা জেলাজুড়ে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারেই দেখা যায়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে, সরাইলের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও প্রজনন সংগ্রহের বিনিময়ে রক্ষার জন্য একটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ। ইউএনও মো. মোশারফ হোসাইন বাসসকে বলেন, প্রাথমিক বৈঠকে এই প্রজাতির কুকুরের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বাজারজাতের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। ভবিষ্যতে একটি প্রজনন কেন্দ্র চালু করে এই গ্রী-হাউন্ডের সংরক্ষণ ও প্রচার করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, আনুষ্ঠানিক ঐতিহ্য হিসেবে এখনো কয়েকটি পরিবার—বিশেষ করে নোয়াগাঁওয়ের চৌরাগুদা গ্রামের দুই ভাই, তপন ও যতন রবিদাস—বংশপরম্পরায় এই কুকুর পালন করে আসছেন। তবে এর জন্য যে পরিমাণ খরচ হয়, তা বেশ ব্যয়বহুল। জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় দুইশ বছর আগে সরাইলের জমিদার দেওয়ান মোস্তফা আলী কলকাতায় যাওয়ার সময় এক ইংরেজ সাহেবের কাছ থেকে এই কুকুরটি কিনে এনেছিলেন, যা তখন ভীষণ মূল্যবান ছিল। ঐতিহ্যবাহী এই কুকু্রটি মূলত বাড়ির নিরাপত্তা ও শেয়াল তাড়ানোর জন্য ব্যাপক ব্যবহার হত। কি‌ছু বছর আগে পর্যন্ত সরাইলের অধিকাংশ বাড়িতেই এই কুকুর দেখা যেত। তবে উচ্চ ব্যয় ও খাদ্যের অভাবে অনেকেই এই কুকুরের পালনে ঝোঁক হারিয়েছেন। বর্তমানে এই শৌখিন পোষ্যটির নিবিড় সংরক্ষণ ও বিপণনের লক্ষ্যে অনেক পরিবার ক্ষুদ্র পরিসরে পালন করে থাকলেও, মূলত কৃষিজীবী ও পেশাদারদের জন্য এখন অনেকটাই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তপন রবিদাস জানিয়েছেন, একটি বড় কুকুরের জন্য দিনে অন্তত ৩০০ টাকার খাবার দরকার হয়। মাছ, ভাত, মাংস, ডিম ও দুধ ছাড়া অন্য কোন খাবার খায় না এই কুকুরগুলো। তবে স্বল্প আয় ও অপ্রতুল অর্থের কারণে এই খরচ যোগাতে পারছেন না অনেকেই। প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই প্রজাতির কুকুরের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণের জন্য সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য। তারা মনে করেন, এই কুকুর শুধুমাত্র সরাইলের ঐতিহ্য নয়, বরং নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সঠিক প্রজনন, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই প্রজাতির কুকুরগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে ব্যবহার সম্ভব। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে এই বিরল প্রজাতির সংরক্ষণ ও বাণিজ্যিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। জানা যায়, ১৯৮৩ সালে সরকারের সহায়তায় সরাইলের একটি সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হয়েছিল, তবে নানা আর্থিক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অতীতের এই প্রয়াসগুলোর পরেও, এখনো কিছু পরিবার এই ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছেন। ইউএনও মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, এই কুকুরের জাতটি দেশ-বিদেশে সরাইলের মুখ উজ্জ্বল করে। তাদের প্রভুভক্ত ও পাহারাদার গুণাবলী রয়েছে এবং গোয়েন্দা কাজে ব্যবহারযোগ্য। তিনি আরও জানান, এই প্রজনন ও সংরক্ষণ উদ্যোগের মাধ্যমে সরাইলের এই ব্যতিক্রমী প্রজাতির কুকুরকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রক্ষা করতে হবে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos