যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে আধুনিক মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুদ্ধ মন্ত্রণালয়, যা আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নামে পরিচিত ছিল, এক সরকারি ঘোষণা দিয়ে ইসলামাবাদকে এই প্রকল্পের নতুন ক্রেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই ঘোষণা বৃহস্পতিক এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে এনডিটিভির মাধ্যমে। এই সিদ্ধান্ত আসে কিছু সপ্তাহ পরে, যখন পাকিস্তানের
যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে আধুনিক মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুদ্ধ মন্ত্রণালয়, যা আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নামে পরিচিত ছিল, এক সরকারি ঘোষণা দিয়ে ইসলামাবাদকে এই প্রকল্পের নতুন ক্রেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই ঘোষণা বৃহস্পতিক এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে এনডিটিভির মাধ্যমে।
এই সিদ্ধান্ত আসে কিছু সপ্তাহ পরে, যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
চুক্তির বিস্তারিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রে-থিয়ন নতুন একটি বাৎসরিক চুক্তির সংশোধিত সংস্করণে ৪১.৬ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে। এর মাধ্যমে পাকিস্তানকে আড়াই বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পের আওতায় গতানুগতিক এআইএম-১২০ সি-৮ মডেলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রদান করা হবে, যা মূলত ২০৩০ সালের মে মাস পর্যন্ত সম্পন্ন হতে প্রত্যাশিত।
এই চুক্তিতে পাকিস্তানের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল, তুরস্কসহ ৩০টিরও বেশি দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ভারতের জন্য উল্লেখযোগ্য এই সিদ্ধান্তের প্রভাব বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে আধুনিকীকরণে এই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাকিস্তানের সংবাদপত্র এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর মিগ-২১ বিমান ভূপাতিত করতে পাকিস্তান এই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার করেছিল।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এআইএম-১২০ সি-৮ হল যুক্তরাষ্ট্রের মূল ডি-শ্রেণির রপ্তানি সংস্করণ যা সঞ্চালিত হচ্ছে। আগে পাকিস্তান এই ক্ষেপণাস্ত্রের একটি পুরনো সংস্করণ, সি-৫, ব্যবহার করছিল যা ২০১০ সালে তাদের বিখ্যাত ব্লক-৫২ এস-ফোর্টি এফ-১৬ বিমানগুলোর সঙ্গে সরবরাহ হয়েছিল।
বিশ্বের অন্যতম কার্যকর দীর্ঘপাল্লার আকাশযুদ্ধ অস্ত্র হিসেবে পরিচিত এআইএম-১২০ ক্ষেপণাস্ত্র ‘লক্ষ্য একবার শনাক্ত ও আঘাত’ করতে সক্ষম, যা ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজে নিজে পরিচালিত হয়, ফলে পাইলটের নির্দেশ ছাড়াই দীর্ঘ দূরত্বে লক্ষ্যভেদে সক্ষম।
দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত পরিস্থিতিতে এই বিক্রয় নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নের মুখ দেখানো হয়েছে, বিশেষ করে মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনব্যাপী সীমান্তযুদ্ধের পর। পাকিস্তান দাবি করছে, এই যুদ্ধবিরতি আনার পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভারত মনে করে, এই সমঝোতা মূলত দুই দেশের সামরিক পর্যবেক্ষকদের সরাসরি আলোচনা এবং মধ্যস্থতা ছাড়াই হয়েছে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির ফলে পাকিস্তানের আকাশ শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে, যা নিয়ন্ত্রণ রেখা অঞ্চলের শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই অস্ত্র বিক্রি অঞ্চলটিতে স্থিতিশীলতা বিরোধী নয়, তবুও এটি দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের উপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য এটি কেবল সামরিক শক্তি বাড়ানোর একটি পদক্ষেপ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের গভীরতার ইঙ্গিত। ভারতের জন্য বুঝতে বাকি নয় যে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক মিত্রতার ধরণ ধাপে ধাপে বদলে যাচ্ছে।