বর্তমানে ইরানের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আলোচনা চালানোর পরিকল্পনা নেই বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তেহরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই। সোমবার এক সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, পারমাণবিক ইস্যুতে ইউরোপের তিনটি দেশ—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি—এর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ভবিষ্যতের আলোচনা পরিচালনাকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে। তাদের এই পদক্ষেপগুলো শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, বরং আলোচনার পরিবেশকেও দুর্বল করেছে। বাঘেই অভিযোগ
বর্তমানে ইরানের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আলোচনা চালানোর পরিকল্পনা নেই বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তেহরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই। সোমবার এক সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, পারমাণবিক ইস্যুতে ইউরোপের তিনটি দেশ—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি—এর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ভবিষ্যতের আলোচনা পরিচালনাকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে। তাদের এই পদক্ষেপগুলো শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, বরং আলোচনার পরিবেশকেও দুর্বল করেছে।
বাঘেই অভিযোগ করেন, ইউরোপীয় ট্রোইকা—অর্থাৎ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি—জেসিপিওএ-র বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াগুলোকে অপব্যবহার করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের দাবিকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তার মতে, এই দেশগুলো যে শর্তে আলোচনা করতে চাইছিল, সেগুলো অযৌক্তিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী বিবেচনায় আলোচনার মানদণ্ডে থাকে না। তিনি আরো বলেন, এই দেশগুলো যুক্তিসঙ্গত কূটনৈতিক হিসেবের চেয়ে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক ইচ্ছার অনুসারী হয়েছে, যা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এজন্য ভবিষ্যতের আলোচনা সংলাপ অন্যরকম পথে যেতে পারে বলে প্রত্যাশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাঘেই জানিয়েছেন, ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ চালিয়ে এক নতুন কাঠামো তৈরি করেছে, যেখানে সংস্থাটির সন্তুষ্টিও রয়েছে। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো প্রথমে এই উদ্যোগে স্বাগত জানালেও পরে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। তিনি জানান, চীন ও রাশিয়া এই ইস্যুতে ইরানের অবস্থানকে সমর্থন করছে।
মুখপাত্র আরো বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ইতোমধ্যেই ইউরোপীয় ট্রোইকার এই পদক্ষেপকে অবৈধ ও অঅনুমোদিত বলে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি, জাতিসংঘ কেন্দ্রিয় এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশও আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। তিনি বলেন, এই তিন ইউরোপীয় দেশের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর জন্য কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করে না, বরং এটি জাতিসংঘের মূল নীতির বিরোধী।
বাঘেই আরও জানান, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে তিনি ইউরোপীয় ট্রোইকা ও জেসিপিওএ-র কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি বর্ণনা করেন, ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে পারমাণবিক ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদ যে প্রস্তাবনা পাস করেছিল, সেগুলোর বেশিরভাগ ছিল ঐকমত্য বা কমপক্ষে বিরোধিতাবিহীন। তবে বর্তমানে নির্দিষ্ট দুই স্থায়ী সদস্যের বিরোধিতার কারণে কোন আইনি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।
তিনি উল্লেখ করেন, ইউরোপীয় ট্রোইকার একতরফা নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের উদ্যোগ বেআইনি এবং রেজোলিউশন ২২৩১ এর বিরোধী। এই রেজুলিউশনের অনুযায়ী, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সব নিষেধাজ্ঞা ১৮ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা, যা এখন কার্যত অচলাবস্থায় পরিণত হয়েছে।
জুন মাসে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের চালানো হামলার বিষয়ে বাঘেই বলেন, ইরান মনে করে এই আক্রমণের জন্য দায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও জায়নবাদী শাসন। তার ভাষ্য, আইএইএ’র রিপোর্ট ও ইউরোপ্রের দেশগুলো এই রিপোর্টের অপব্যবহার করে বোর্ড অব গভর্নর্সে একটি প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে এই আক্রমণের অজুহাত তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এই রিপোর্টে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ পথ থেকে সরে গেছে—এমন কোনো প্রমাণ নেই। তাই, আইএইএ’র উচিত ছিল এই ধরনের হামলার নিন্দা জানানো। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জাতিসংঘ ও আইএইএ অনুরূপ প্রস্তাব অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলির ওপর হামলা আন্তর্জাতিকভাবে বেআইনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাঘেই জানিয়েছেন, ‘‘বর্তমানে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো আলোচনা করতে ইরানের পরিকল্পনা নেই।’’ তিনি emphasized, তেহরান এখন ইউরোপীয় ট্রোইকা ও যুক্তরাষ্ট্রের活動ের আইনি ও কূটনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে।
তিনি যোগ করেন, ‘‘যোগাযোগ ও পরামর্শের মাধ্যমে কূটনীতি চালিয়ে যাওয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। যখনই ইরান মনে করবে যে, কূটনীতি দিয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব, তখনই তারা সিদ্ধান্ত নেবে।’’
বাঘেই বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধেকার্যকলাপ নিয়ে গর্বিত হওয়ায় নিজেদের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে তুলছে। অবৈধ কর্মকাণ্ড স্বীকার করে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনও আইনি বৈধতা না থাকলেও, এটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তাদের বেআইনি কার্যকলাপের চিত্র আরও স্পষ্ট করে তুলছে।