জীবন দর্শন: শীতল ভাবনা ও সত্যের সন্ধানে

জীবন দর্শন: শীতল ভাবনা ও সত্যের সন্ধানে

আমরা প্রতিদিনের অনেক সময় মোবাইলের পেছনে কাটাচ্ছি, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় spent করে। এই সময়ের মধ্যে কতবার ভাবতে গিয়ে মনে হয়েছে যে মনে জেগে ওঠা চিন্তা বা গভীর ভাবনা অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে গেছে। সত্যিই কি আমরা তেমন কিছু দেখছি বা পড়ছি যা মনোভাবকে গভীর করে তোলে? কিংবা বেশিরভাগ ঘটনাই কি কেবল ভাইরাল ট্রেন্ড বা অসংলগ্ন

আমরা প্রতিদিনের অনেক সময় মোবাইলের পেছনে কাটাচ্ছি, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় spent করে। এই সময়ের মধ্যে কতবার ভাবতে গিয়ে মনে হয়েছে যে মনে জেগে ওঠা চিন্তা বা গভীর ভাবনা অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে গেছে। সত্যিই কি আমরা তেমন কিছু দেখছি বা পড়ছি যা মনোভাবকে গভীর করে তোলে? কিংবা বেশিরভাগ ঘটনাই কি কেবল ভাইরাল ট্রেন্ড বা অসংলগ্ন মজার ভিডিও হিসেবে দেখা হচ্ছে? হয়তো মনে হতে পারে, এতে সমস্যা কোথায়? আজই সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখব যে, আসল সমস্যা কোথায়।

একবার ভাবুন, বিখ্যাত ইংরেজ কবি জন কীটসের লেখা ‘লামিয়া’ কবিতাটি পড়ে থাকলে আপনি বুঝবেন কীভাবে জীবনের আনন্দ বা প্রেমের গভীরতা কিছুটা হলেও শীতল ভাবনার কাছে হার মানে। কবিতায় এক তরুণ প্রেমের আনন্দে মাতোয়ারা হয়, কিন্তু তার প্রেমের সঙ্গিনী সাপ হয়ে থাকার অন্ধকার সত্যটি একদিন প্রকাশ পায়। এই কাহিনীটি আমাদের শেখায়, মোহ বা অল্পসল্প সুখের জন্য কখনো কখনো সত্যের কোল্ড ফিলোসফিকে উপেক্ষা করাটা কতটা ক্ষতিকর।

এখন যদি বলতে হয়, গত এক বছরে দেখাক—প্রচুর সিনেমা, ওয়েব সিরিজ ও নাটকই ভয়েস বা থট প্রভোকিং এর বাইরে। কিন্তু অনেক অত্যন্ত জনপ্রিয় কন্টেন্টের মধ্যে প্রকৃত গভীরতা বা দর্শন থাকে না। আবার অনেকে এ বলে থাকেন যে বিনোদনের জন্যই এসব দেখা হয়, এবং দর্শন বা শিক্ষামূলক জিনিসের দরকার নেই। কিন্তু এর ফলাফল কি? সমাজে ভুল জিনিসের প্রচার বাড়ছে, যেখানে অশ্লীল গালাগাল বা অপ্রয়োজনীয় দেহ-প্রদর্শনী বেশি জনপ্রিয়। অন্যদিকে, সত্যিকার অর্থে চিন্তা-চেতনামূলক বা সমাজের জন্য উপকারী কন্টেন্ট খুবই কম প্রসারিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে ও মিডিয়ায় চিন্তার মুক্তি বা গভীর মানসিকতা নিগৃহীত হয়, সেটা যেন ইচ্ছে করে। ইতিহাসে দেখবেন, বুদ্ধিজীবী বা জ্ঞানী মানুষজন নিত্যই নিগ্রহের শিকার হয়েছেন, তাদের জীবন বিপন্ন হয়েছে। সমাজে দুটো বড় শ্রেণি—শাসক ও শোষিতের মধ্যে এই গতানুগতিক শক্তির লড়াই চলমান। এর বাইরে মাত্র কয়েকজন প্রকৃত মেধাবী মানুষ থাকেন, যারা সমাজের বিবেক হিসেবে কাজ করতে চান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, শাসক বোল্ড, কূটচাল বা সুচিন্তিত কৌশলে এই মেধাবীদের দুর্বল করে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারেও দেখবেন, নেতিবাচক বা স্টুপিড কনটেন্ট বেশি প্রচারিত হয়, কারণ সেগুলো সহজে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যারা নিজেদের জ্ঞান শরিক করতে চান, তারা সাধারণত অর্থ বা পন্যের জন্য অতি সক্রিয়। তারা নিজেদের বুদ্ধিতে সুবিধা লাভের চেষ্টায় থাকে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানী মনে করলে দেখতে পাবেন, তাঁদের কাছ থেকে সত্যের শিক্ষা কম এবং ভুল ধারণাই বেশি। অনেক সময় আসল জ্ঞানী বা ধূর্তরা নিজেদের ইগোর ওপর ভর করে সমাজ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে, কারণ তাঁদের মনোভাব ও বিশ্লেষণ সাধারনত খুবই সূক্ষ্ম ও শক্তিশালী। আইন্সটাইন একবার মন্তব্য করেছিলেন, মহাবিশ্ব ও মানুষের অজ্ঞতা এক অসীম ব্যাপার, যেখানে আমি নিশ্চিত মহাবিশ্বের ব্যাপারে অজ্ঞতা থাকলেও মানুষের অজ্ঞানতা অবর্ণনীয়।

প্রকৃত জীবন দর্শন সহজ বা চমৎকার কিছু নয়; বরং যখন আপনি রিজন বা যুক্তি অনুসরণ করবেন, তখন আপনি দেখতে পাবেন অনেক চার্মিং জিনিসই ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সত্যের সামনে মাথা নত করতে না চাইলে এ মানব জীবন বা সোশ্যাল মিডিয়া যেখানে আপনি ঢালাও ভাবে নিজেকে প্রকাশ করেন বা বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ ভাঙ্গাচুরা উপস্থাপন করেন—সেখানে নিজের মনকে স্মার্ট রাখাটা অপরিহার্য। সত্য সুন্দর প্রকৃতজ্ঞানে খুঁজে নিতে হবে। নিজের ভেতরের অন্তর্দৃষ্টি ও চিন্তা শক্তিকে শাণিত করুন, অন্ধভাবে ভক্তি বা ফাঁস হওয়া ট্রেন্ড অনুসরণ না করে। কারণ, যারা আমাদের শোষণ করছে, সেই চাওয়াই আমাদের ভিতরের বিশ্লেষণ ক্ষমতা ধ্বংস করে দিচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অন্য কোথাও প্রোফাইলের মুখোশ পরার পরিবর্তে, প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা উচিত জীবনের অর্থ। তাদের কাছ থেকে জীবন, চিন্তা ও বাস্তবতার গভীরতা জেনে মনকে উদ্দীপ্ত করুন। অন্তর্জগতের সত্যটি উপলব্ধি করার জন্যই জীবন দর্শনকে জানতে হবে। অন্যথায়, উপভোগ্য অল্পক্ষণের বিনোদন আর অন্ধবিশ্বাসের মাঝে নিজের মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে পারেন।

অন্তিমে, স্টিফেন হকিংস বলেছেন, “The greatest enemy of knowledge is not ignorance, it is the illusion of knowledge.” অর্থাৎ, জ্ঞানের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অজ্ঞতা নয়, এটি হলো জ্ঞান বলে মনে করার ভুল। এই কথাটিই আমাদেরকে চিন্তা করতে শেখায় যে, সত্যের সন্ধানে থাকাই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। জীবন ও সমাজের গভীরতা উপলব্ধি করতে হলে, সত্যকে নিজ চোখে দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নিজেদের আড়াল না করে, সমাজের প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকে শেখার মনোভাবই একমাত্র ভবিষ্যতের উন্নত জীবন উপহার দিতে পারে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos