নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশন, যেখানে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই সফরটি তার জন্য খুবই সুখের ছিল না বরং বিভিন্ন সমস্যায় তিনি পড়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই নাটকীয় ঘটনাগুলোর পেছনে এক ঝাঁক ষড়যন্ত্রের হাত আছে। এ তথ্য মঙ্গলবারই প্রকাশিত হয় সেনএন-এর প্রতিবেদনে।
নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশন, যেখানে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই সফরটি তার জন্য খুবই সুখের ছিল না বরং বিভিন্ন সমস্যায় তিনি পড়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই নাটকীয় ঘটনাগুলোর পেছনে এক ঝাঁক ষড়যন্ত্রের হাত আছে। এ তথ্য মঙ্গলবারই প্রকাশিত হয় সেনএন-এর প্রতিবেদনে।
গত বুধবার ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালতে লিখেছেন, ‘জাতিসংঘে যা ঘটছে, তা সত্যিই অপমানজনক— একের পর এক তিনটি অশুভ ঘটনা ঘটছে!’ তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘের সদর দপ্তরে একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া এসকেলেটর, নষ্ট টেলিপ্রম্পটার এবং অডিও সিস্টেমের কারণে তার সফর ব্যহত হয়েছে। তিনি এসবকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর যথাযথ তদন্তের দাবি তুলেছেন।
ট্রাম্প আরও জানান, বুধবার তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই তিনি এই ‘ষড়যন্ত্রের’ ইঙ্গিত করেন, যেখানে তিনি বলেন, ‘আমি জাতিসংঘে দুটি জিনিস দেখেছি: একটি নষ্ট এসকেলেটর ও অন্যটি নষ্ট টেলিপ্রম্পটার।’ পরবর্তী সময়ে তাঁর বক্তব্যের মধ্যে থাকা অডিও সমস্যার কথাও উল্লেখ করেন।
বলা হয়ে থাকে, টেলিপ্রম্পটার একটি প্রযুক্তি যন্ত্র, যা বক্তাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় সহায়তা করে। এর স্ক্রিনে পরবর্তী লাইনের অংশবিশেষ বা বাক্য ফুটে ওঠে, যাতে বক্তা বুঝতে পারেন কি বলবেন।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, জাতিসংঘ পুরোপুরি স্বচ্ছতার সঙ্গে এই বিষয়টিকে তদন্ত করতে প্রস্তুত, যাতে সত্য উদ্ঘাটন হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ছোটখাটো প্রযুক্তিগত ত্রুটির বিষয়ে ট্রাম্পের প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখানো তার মনোভাবের চিত্র দেখায়। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি বিভিন্ন সময় জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ট্রাম্পের পোস্টে তিনি বলেন, ‘প্রায় কাজের জন্য, যার জন্য জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা, তারা তা করতে পারছে না।’ তিনি দাবি করেন, ‘প্রথমে এসকেলেটরটি শক্তিশালী শব্দে বন্ধ হয়ে যায়, এটাই প্রথম সমস্যা।’ সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘আমরা ঠিক সেই স্টিলের সিঁড়িতে পড়ে যাইনি, কপালগুণে রেলিং ধরে রাখি। যদি না তা করতাম, তবে বড় বিপদে পড়তে হত।’ তিনি এটিকে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেন।
সপ্তাহান্তে লন্ডন টাইমসেও এই ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। সেখানে বলা হয়, জাতিসংঘের কর্মীরা ট্রাম্পের প্রতি বিদ্রুপ করে, বলছে তারা এসকেলেটর ও লিফট বন্ধ করে দিতে পারে। ট্রাম্প মনে করেন, এই কাজের জন্য কিছু লোক তাদের গ্রেপ্তার করা উচিত।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের শুরুতেই টেলিপ্রম্পটার ‘অকেজো’ হয়ে যায়। কিছুক্ষণের জন্য চালু হলেও, তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে অডিও ঠিকভাবে কাজ করেনি।’ এরপর তিনি বিদ্রুপের সুরে বলেন, ‘আমার কথাগুলো কানে শুনতে পায়নি, কারণ দোভাষীরা বেশিরভাগ সময় ইয়ারপিস বিহীন ছিলেন।’ ট্রাম্প এই ঘটনার জন্য তিনি যথাযথ তদন্তের দাবি জানান, এর জন্য তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ইমেইল পাঠাবেন এবং বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য ভিডিও ফুটেজ দেখার দাবি করেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটি তিন বার ষড়যন্ত্রের ঘটনা, যার জন্য জাতিসংঘ লজ্জিত হওয়া উচিত। আমি মহাসচিবের কাছে এই বিষয়ে চিঠি পাঠাব এবং বিস্তারিত তদন্তের দাবি জানাব।’
অন্যদিকে, জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউস একে অপরকে এই ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’ এর জন্য দায়ী করে। জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই টেলিপ্রম্পটার পরিচালনার দায়িত্ব হোয়াইট হাউসের। অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই যন্ত্রটি জাতিসংঘ সরবরাহ করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এক্স বলেন, ‘আমরা এই ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেব। তাদের এই ভুলে জাতিসংঘের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’ ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিটও বলেন, ‘যদি কোনও কর্মী জানাবার পরে এসকেলেটর বন্ধ করে দেয়, তাহলে তাকে অবিলম্বে বরখাস্ত করতে হবে এবং তদন্ত করতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ সংবাদসংস্থা দ্য টাইমসের এক স্ক্রিনশটও পোস্ট করেন তিনি, যেখানে দেখা যায়, ট্রাম্পের আগমনের সময় জাতিসংঘ কর্মীরা ঠাট্টা করে বলছেন, তারা এসকেলেটর বন্ধ করে দিয়ে বলছে, ‘টিকিট শেষ হয়ে গেছে, এখন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হবে।’