মোস্তাফিজুর রহমান খুব কম কথা বলেন এবং মৃদুভাষী স্বভাবের এই পেস বোলারটি সাংবাদিকদের কাছে বেশ প্রিয়। তিনি যখন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হন, তখন প্রশ্নের জবাব ছোট ছোট বাক্য বা এক শব্দের মধ্যে দিয়ে দিয়ে থাকেন। কখনো বা তিনি এককথায় বা একদুই শব্দের মধ্যেই থেমে যান। এর পরও যদি তাঁর সতীর্থদের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়, কেউ
মোস্তাফিজুর রহমান খুব কম কথা বলেন এবং মৃদুভাষী স্বভাবের এই পেস বোলারটি সাংবাদিকদের কাছে বেশ প্রিয়। তিনি যখন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হন, তখন প্রশ্নের জবাব ছোট ছোট বাক্য বা এক শব্দের মধ্যে দিয়ে দিয়ে থাকেন। কখনো বা তিনি এককথায় বা একদুই শব্দের মধ্যেই থেমে যান। এর পরও যদি তাঁর সতীর্থদের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়, কেউ বলবে, তিনি দলের অন্যতম হাসিখুশি ও মজার মানুষ। বাইরের অন্যান্যদের জন্য এই দিকটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও, মাঠের বাইরেও মোস্তাফিজের বেশ কিছু দিক আলাদা। কয়েক দিন আগে আবুধাবি থেকে ডুবাই আসার সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা গাড়িতে লাগেজ গুছাচ্ছিলেন, তখন তিনি শেষ মুহুর্তে হোটেলের গেটের বদলে সরাসরি পেস বোলিং কোচ টেইটের দিকে ছুটে যান। মোস্তাফিজ তার লাগেজ একবার কোচের কাছে দিতে যান, তবে শেষ মুহুর্তে আবার সরিয়ে নেন, হাসির ঝিলিক দিয়ে। এই ছোট রসিকতা তাদের মুখে হাসি ফুটাতে সক্ষম হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে কোচ টেইট বলেছিলেন, “আমার কাজ হলো মোস্তাফিজকে খুশি রাখা এবং তার আত্মবিশ্বাস বাড়ানো।” তিনি আরও বলেছিলেন, “বাকিটা তিনি নিজে ভালো করে নেবে।” এটা মোস্তাফিজের জন্য সত্যিই একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, যা তিনি বেশ ভালভাবেই পালন করে যাচ্ছেন। গত শনিবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে সেই দক্ষতা আবার দেখা গেলো। শ্রীলঙ্কার পাওয়ার প্লেতে তাকে প্রথমেই তুলে নেওয়া হয়েছিল, তবে সময়ে সময়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়েছেন। অধিনায়ক লিটন দাস যখন বল নিয়ম করেছিলেন, তখন মোস্তাফিজকে আনা হয়। প্রথম ওভারটি তিনি শেষ করেন মাত্র ৩ রান দিয়ে। এর পরের ওভারে, মেহেদী হাসান মিরাজ শ্রীলঙ্কার কুশল মেন্ডিসের উইকেট তুলে নেন। এই উইকেট তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ঐ ম্যাচে মোস্তাফিজের বোলিং তুলে ধরেছেন, কিভাবে তিনি দলকে বিপদের মুখ থেকে উদ্ধার করেছেন। ১৭তম ওভারে শানাকা খুবই বিধ্বংসী হয়ে উঠলেও, মোস্তাফিজের ওভার শেষ হয় ৫ রানে। আবার পরের ওভারেও তিনি ফিরে আসেন। এই ওভারে শুরুতেই ভাব ছিল যে, শরিফুল ইসলাম ২টি ছক্কা খাওয়ার পর দুশ্চিন্তায় থাকবেন, কিন্তু মোস্তাফিজ এর মাঝেও চারটি বলের মধ্যে একজনের ক্যাচ বাইরে চলে যায়। যার ফলে এই ওভারে মোট ৫ রান যোগ হয়। এক ওভার পর আবার হাজির হন মোস্তাফিজ। তিনি এই পরিস্থিতিতে ওভার শুরু করেন যেখানে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন। প্রথম বলটা ছিল ডিফেন্স, পরে চারটি বল কোনও বাউন্ডারিতে যায়নি। তবে সেই ওভারে, শানাকা একটি ক্যাচ ছেড়ে যান, তবে মোস্তাফিজ সেটি ধরে ফেলতে পারতেন। আউট করে না পারলেও, তিনি শেষ করেন ওভারটি। এরপর আবার তিনি সমান গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ফিরে আসেন। তখন দল বিপদে, শ্রীলঙ্কার রান বাড়ছে এবং উইকেটের জন্য চাপ বাড়ছে। প্রথম বলে হৃদয় ক্যাচ ছেড়ে যান, তবে সেটিতে রান আউট হয়ে যান আসালাঙ্কা। চতুর্থ বলের ক্যাচটি ধরা পড়ে, ও শেষ বলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আউট। এই ওভার থেকে আসে ৫ রান। মূলত, আবারও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে আসেন মোস্তাফিজ। শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ১৬৮ রান করে, কিন্তু মোস্তাফিজ চার ওভারে ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট হারিয়ে এবং ১ বল থাকতেই ম্যাচ জিতে যায়। এটি শুধু শনিবারের গল্প নয়, মোস্তাফিজ বাংলাদেশের জন্য অনেক বারই দলের উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ডেথ ওভার বা ম্যাচের শেষ চার ওভারে তার পরিসংখ্যান বলছে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই সময়ে তিনি ওভারপ্রতি ৭.৯২ রান দেন। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি জয়ে তার অবদান সবচেয়ে বেশি; মোট ৫৭টি জয় তার অংশগ্রহণে। তবে মাঝে মধ্যে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান শুধু পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়। ওভারপ্রতি ৬.২০ রানে তিনি নিয়েছেন ১০৩ উইকেট, যা এই বছরের শেষে আরও দেখাচ্ছে তার গুরুত্ব। বাংলাদেশ শুধুমাত্র মোস্তাফিজের জন্যই জিতেনি, তবে তার ছাড়া খেলাগুলো বেশিরভাগই হেরেছে। মোস্তাফিজের অংশগ্রহণে এবারের এই শিরোপা সংগ্রামে নজর দেওয়া গেলে দেখা যায়, সাইফ হাসান বলেছিলেন, “তিনি যখনই বল করেন, দলের পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে ওঠে। তিনি বিপদের সময় এসে বোলিং করেন এবং ডেলিভারিই দেন বেশিরভাগ সময়।” সত্যি বলতে, মোস্তাফিজ বাংলাদেশের বিপদে প্রিয় বন্ধু। একজন সত্যিকার ‘ত্রাতা’ হিসেবে তিনি সংকটে দলের পাশে থাকেন। যদি তিনি খুশি থাকেন, বাংলাদেশও জিতে যায়।”}}}“`း {