দেশের জীববৈচিত্রের জন্য বড় হুমকি ৬৯টি বিদেশি আগ্রাসী প্রজাতি

দেশের জীববৈচিত্রের জন্য বড় হুমকি ৬৯টি বিদেশি আগ্রাসী প্রজাতি

দেশে জীববৈচিত্র্যের জন্য ধীরে ধীরে বড় বিপদ সৃষ্টি করছে ৬৯টি বিদেশি প্রজাতি। এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে উদ্ভিদ, মাছ, পাখি, কীটপতঙ্গসহ অন্যান্য প্রাণী অন্তর্ভুক্ত। শেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশে এইসব আগ্রাসী প্রজাতির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে ৪৬টি উদ্ভিদ, ১৬টি মাছ, ৫টি কীটপতঙ্গ এবং আরও কিছু শামুক ও অন্যান্য পাখি।এসব প্রজাতির অধিকাংশই এসেছে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও

দেশে জীববৈচিত্র্যের জন্য ধীরে ধীরে বড় বিপদ সৃষ্টি করছে ৬৯টি বিদেশি প্রজাতি। এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে উদ্ভিদ, মাছ, পাখি, কীটপতঙ্গসহ অন্যান্য প্রাণী অন্তর্ভুক্ত। শেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশে এইসব আগ্রাসী প্রজাতির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে ৪৬টি উদ্ভিদ, ১৬টি মাছ, ৫টি কীটপতঙ্গ এবং আরও কিছু শামুক ও অন্যান্য পাখি।এসব প্রজাতির অধিকাংশই এসেছে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বিভিন্ন দেশ থেকে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত নদীপথে দুর্ঘটনাবশত এদের আগমন ঘটে, যা বর্তমানে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে।সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালেও রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে কেয়ার বাংলাদেশ (কেবি) আয়োজিত ‘জার্নালিস্ট ওরিয়েন্টেশন ওয়ার্কশপ অন পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন’ কর্মশালায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম। সভাপতিত্ব করেন সাবেক মহাপরিচালক আব্দুল মুঈদ। কর্মশালায় বক্তব্য দেন কেবির এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন ম্যানেজার আজমত আব্বাস, বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. সালেহ আহমেদ এবং প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ড. দিলরুবা শারমিন।অন্যান্য উপস্থিত ছিলেন ডিএই-র সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডলসহ বিশিষ্টরা।বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, বিদেশি আগ্রাসী আগাছা পার্থেনিয়াম (Parthenium hysterophorus) বাংলাদেশের জন্য এখন নতুন এক বিপদ। এই মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার উদ্ভিদ দ্রুত দ্রুত বংশবিস্তার করে মাঠ, রাস্তার ধারে ও পতিত জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে।অপরদিকে, বিদেশি আগ্রাসী মাছগুলোও দেশের প্রাকৃতিক মাছের জন্য বড় একটি হুমকি, এবং এরা প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে।গবেষকরা বলেছেন, পার্থেনিয়াম কৃষিজমির উর্বরতা কমিয়ে দেয়, পাশাপাশি ধান, গম, ভুট্টা, সবজি ও ডালজাতীয় ফসলের উৎপাদন হ্রাস করছে। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এপ্রাণীটি জাতীয় মাটির ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বদলিয়ে স্থানীয় ঘাস ও গাছপালা জন্মাতে বাধা দেয়, ফলে দেশের স্বতন্ত্র উদ্ভিদ প্রজাতি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।মানুষ ও পশুপাখির জন্য ও পার্থেনিয়াম অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর নির্গত রাসায়নিক উপাদান ত্বক ও শ্বাসতন্ত্রে অ্যালার্জি, হাঁপানি, চুলকানি, চোখে প্রদাহ সৃষ্টি করে। গবাদি পশু যদি এই আগাছা খায়, তবে দুধ মানের অবনতি ও উৎপাদন কমে আসে।বিদেশি আগ্রাসী মাছের মধ্যে ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশে মাছ চাষের জন্য আনা আফ্রিকান ক্যাটফিশ (Clarias gariepinus) রাক্ষুসে হয়ে দেশের ছোট মাছের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমিয়ে দেয়। ২০১৪ সাল থেকে এর চাষ ও বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও এখনও অবৈধভাবে বাজারে পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে, এই মাছ দেশীয় মাছের সঙ্গে সংকরায়িত হয়ে জেনেটিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন।একইভাবে, নিষিদ্ধ পিরানহা মাছও দেশের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এছাড়া, সাকারমাউথ ক্যাটফিশ (Hypostomus plecostomus), যাকে স্থানীয়ভাবে রোহিঙ্গা মাছ বা সাকার ফিশ নামে ডাকা হয়, মূলত অ্যাকুয়ারিয়াম মাছ হলেও এখন নদী-নালায় ছড়িয়ে পড়েছে। এটি দূষিত পানিতেও বেঁচে থাকতে পারে, দেশীয় মাছের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এবং নদীর তলদেশে গর্ত করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করছে।এছাড়াও, বিদেশি কার্প মাছ যেমন বিগহেড, সিলভার ও কমন কার্প, যারা বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য আনা হয়, এখন প্রাকৃতিক জলাশয়ে স্থান করে নিয়েছে, যা স্থানীয় প্রজাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়েও সতর্ক করে বলেছেন, এই সকল বিদেশি প্রজাতিগুলোর প্রবেশ ও বিস্তার রোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে, বাংলাদেশের বৈচিত্র্য ও দেশের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হবে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos