নতুন ব্যয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ

নতুন ব্যয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ

চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) সংশোধিত বাজেটের পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি ও উন্নয়ন ব্যয়ের সাশ্রয় হওয়া অর্থ পরিচালনা বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না। পাশাপাশি যেসব প্রকল্প অনুমোদন হয়নি সেসব স্কিমে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া যাবে না। আর ভিন্ন খাতে

চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) সংশোধিত বাজেটের পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি ও উন্নয়ন ব্যয়ের সাশ্রয় হওয়া অর্থ পরিচালনা বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না। পাশাপাশি যেসব প্রকল্প অনুমোদন হয়নি সেসব স্কিমে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া যাবে না। আর ভিন্ন খাতে স্থানান্তর করা যাবে না উন্নয়ন প্রকল্পের সাশ্রয়কৃত অর্থ। জারি করা পরিপত্রের আলোকে চলতি অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের প্রস্তাব সব মন্ত্রণালয়কে আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ পুরোটা খরচ করতে পারে না অনেক মন্ত্রণালয়। ফলে নতুন করে অর্থ চাইবে কেন। নতুন বরাদ্দ দিলেও ব্যয় করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোর যে প্রকল্প আছে সেখানে অর্থ ব্যয়ের প্রভিশন আছে। সেটি সীমিত রাখাই উচিত। এক খাতের অর্থ অন্য খাতে নেওয়ার প্রবণতা থাকা উচিত নয়। এই অর্থনীতিবিদের মতে, এমনিতে অনেক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় একনেকে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্পে অর্থ সংস্থান থাকে না। ফলে অনুমোদন প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া উচিত।

প্রসঙ্গত ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ব্যয় ধরে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা এবং ঘাটতি (অনুদানসহ) দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা এবং পরিচালন ব্যয় তিন লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ধারাবাহিক নিয়মে প্রতি বছরের মাঝামাঝি এসে বাজেট সংশোধন কার্যক্রম শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সংশোধিত পর্যায়ে এসে নতুন ব্যয় যাতে না বাড়ে সেদিকে মনোযোগ বেশি দেওয়া হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, যানবাহন কেনার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় বরাদ্দের ৫০ শতাংশ করতে পারবে। পাশাপাশি জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্র ছাড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবে না। ভ্রমণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না। ভ্রমণ ও যানবাহন কেনার বাকি ৫০ শতাংশ বরাদ্দ স্থগিত থাকবে। এই দুই খাতের বরাদ্দ অন্য খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের নীতি ও উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিপির বরাদ্দ থেকে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। শতাংশ হিসাবে ৫ দশমিক ৩১ ভাগ। এডিপি সংশোধনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোকে ১৪টি নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে ওই পরিপত্রে। সেখানে ধীরগতির প্রকল্পের টাকা কেটে দ্রুতগতির গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যাত্তোর, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসনসংক্রান্ত প্রকল্প। মন্ত্রণালয়গুলোর উদ্দেশে বলা হয়, সংশোধিত এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা যাবে, তবে সে ক্ষেত্রে অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ও ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয়ের ভিত্তিতে যুক্তিসঙ্গত ও সম্ভাব্য ব্যয়কে বিবেচনায় নিতে হবে। এতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারির মধ্যে যেসব প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো সম্ভব হবে না- সেগুলো আরএডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ ছাড়া অনুমোদনহীন কারিগরি সহায়তা প্রকল্পও সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা যাবে না। তবে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাত্তোর পুনর্বাসন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখা, অগ্রাধিকার প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া, আরএডিপিতে মূল অংশে বরাদ্দবিহীনভাবে কোনো প্রকল্প না রাখা এবং চলতি অর্থবছরে শেষ হবে এমন নির্দিষ্ট প্রকল্পের বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নানা কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে এক লাখ ২৬৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ হাজার ৯৮ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। রাজস্ব সংশোধনের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, বিগত দুই অর্থবছরের (২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১) প্রথম ছয় মাসে এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আদায়ের গতিধারা বিবেচনায় নিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos