যতদিন কালোটাকা থাকবে ততদিন সাদা হবে

যতদিন কালোটাকা থাকবে ততদিন সাদা হবে

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অবারিত করা হচ্ছে। নানা পদ্ধতিগত কারণে বৈধ অর্থও অবৈধ হয়ে যায়। এসব অর্থকে বিনিয়োগমুখী করতে কর প্রদান সাপেক্ষে সাদা বা বৈধ করার সুযোগ থাকবে। এ বছরের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেটেও সুযোগটি রাখা হচ্ছে। তবে শুধু আসছে বছরই নয়, বরং সামনের দিনগুলোতে এই সুযোগ অব্যাহত রাখার পক্ষে নীতিনির্ধারকেরা। কারণ, বিপুল পরিমাণ অর্থ

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অবারিত করা হচ্ছে। নানা পদ্ধতিগত কারণে বৈধ অর্থও অবৈধ হয়ে যায়। এসব অর্থকে বিনিয়োগমুখী করতে কর প্রদান সাপেক্ষে সাদা বা বৈধ করার সুযোগ থাকবে। এ বছরের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেটেও সুযোগটি রাখা হচ্ছে। তবে শুধু আসছে বছরই নয়, বরং সামনের দিনগুলোতে এই সুযোগ অব্যাহত রাখার পক্ষে নীতিনির্ধারকেরা। কারণ, বিপুল পরিমাণ অর্থ মূলধারার বাইরে থাকলে অপরাধজনিত কারণসহ অনুত্পাদনশীল খাতে ব্যয়ের সুযোগ থাকে। সাদা করার সুযোগ দিলে তা দেশে বৈধ করার মাধ্যমে সরকারের যেমন রাজস্বপ্রাপ্তি ঘটে, তেমনি বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। যদিও বাংলাদেশে ইতিপূর্বে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও খুব বেশি টাকা সাদা হয়নি। পরবর্তী সময়ে কালোটাকা না বলে অপ্রদর্শিত অর্থ বলা শুরু হয় এবং এই টাকাকে বিনিয়োগে আনার জন্য জরিমানা মাফ করে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন অনেকে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় শেয়ারবাজার, জমি-ফ্ল্যাট, ব্যাংক-সঞ্চয়পত্রে রাখা টাকা ও নগদ টাকাসহ সব ধরনের অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, কালোটাকা সাদা করলে এনবিআর ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহি করতে হবে না এমন ঘোষণাও দেওয়া হয়। এমন সুযোগ ভবিষ্যতেও থাকছে এমন কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি মনে করেন, যত দিন পর্যন্ত অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শিত না হবে, তত দিন এ ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে হবে।

গতকাল বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কালোটাকা নয়, এটা অপ্রদর্শিত অর্থ। আমাদের অর্থনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্যই এটা করতে হবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, জমি রেজিস্ট্রেশন ফি অনেক বেশি, বাজারদরে লেনদেন হলে অপ্রদর্শিত টাকা থাকত না। আমাদের সিস্টেমের কারণেই এখন ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকে, সেজন্য তারা বিপদে পড়েন। অর্থমন্ত্রী বলেন, জমি রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো হচ্ছে, আগে ইনকাম ট্যাক্স রেট বেশি ছিল, কেউ দিত না। সেজন্য আমরা পর্যায়ক্রমে ইনকাম ট্যাক্স রেট, স্ট্যাম্প ডিউটি এগুলো কমিয়ে দিয়েছি। আশা করি, একদিন অপ্রদর্শিত অর্থ আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বিলীন হয়ে যাবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কালো বা অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করা বাবদ সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। শেয়ারবাজার, নগদ টাকা কিংবা জমি-ফ্ল্যাট কিনে সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৯৩৪ জন কালোটাকা সাদা করেছেন। এই সময়ে মোট ১২ হাজার কোটি টাকার মতো বৈধ হয়েছে।

সরাসরি ভ্যাকসিন ক্রয়ের অনুমোদন

গতকাল ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের কাছ থেকে ভ্যাকসিন সরাসরি পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আখতার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, চীন থেকে যে ৫ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে, তার বাইরে আরো ভ্যাকসিন কেনা হবে। তবে কত ডোজ কত টাকায় কেনা হবে, সে বিষয়টি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত হলে বিস্তারিত জানা যাবে। গতকাল শুধু নীতিগত অনুমোদন হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাত অত্যন্ত জরুরি বিষয়, তাদের দায়িত্ব ছিল এসব চাহিদার বিষয়ে যথাযথ সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া, কিন্তু তখন সেটি করা হয়নি। এর কারণ হলো, করোনা পৃথিবীতে সবার জন্যই প্রথম, তাই সবাই যে সব কাজ সম্পর্কে অবগত থাকবে তা-ও নয়। তিনি বলেন, ‘যদি বারবার একই ভুল দেখা যায়, সেক্ষেত্রে ক্রয় কমিটির বৈঠকে নিয়ে আসা হবে না। কোভিড সারা বিশ্বে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। এর মধ্যে কাজের পরিধি বাড়ছে। আমাদের এখন এগুলো চিন্তা না করে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে হবে। এই বিবেচনায় আমরা সরাসরি ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছি। যথাযথভাবে যদি আমরা এগুলো করতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমাদের সাশ্রয় হতো। তার পরও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সবাইকে বলেছি সাশ্রয়ী হতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ভূমিকার কারণে অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে :

করোনার বছরেও দেশে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ভূমিকার কারণে অর্থনীতির দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনাকালীন সময়ে সময়মতো প্রণোদনা ঘোষণা করার ফলে সাধারণ মানুষের হাতে অর্থ পৌঁছেছে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। আমাদের সামস্টিক অর্থনীতির গতিধারর প্রতিটি খাত এখন উন্নতির দিকে। অর্থমন্ত্রী জানান, এখন মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রয়েছে। করোনা দুর্যোগের মধ্যেও এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৩২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি না থাকলেও আমাদের দেশে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ১১ মাসে ২২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী অর্থবছরে রিজার্ভের আকার ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণের আকারও কমে এসেছে। এখন ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ, যা জুনে ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপির হার ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। বর্তমানে সুদের হারও অনেক কমে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। রাজস্ব নিয়ে আমরা সবসময় শঙ্কিত থাকি। গত এপ্রিল পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। এভাবে প্রত্যেকটি অর্থনৈতিক সূচকে দেশ অনেক ভালো করছে। যারা চাকরি হারিয়েছে, যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবাইকে সহায়তার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এজন্য দেশে অর্থের প্রবাহ বেড়েছে। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নতি করছে।

ভ্যাকসিন ছাড়াও দুটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন :

গতকাল অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চীন থেকে সরাসরি পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন ক্রয় ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন সিএমএসডি কর্তৃক কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর ব্যবহারের জন্য ৪০টি অক্সিজেন জেনারেটর সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিআইসি কর্তৃক ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউরিয়া সারের যোগান অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে কাতার হতে ৫ লাখ মে. টন, সৌদি আরব হতে ৫ লাখ মে. টন এবং ইউএই হতে ২ লাখ ৮০ হাজার মে. টনসহ সর্বমোট ১২ লাখ ৮০ হাজার মে. টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি স্বাক্ষরের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা :

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos