দেশজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ আতঙ্ক

দেশজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ আতঙ্ক

করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর চীন থেকে আগতদের মাধ্যমে দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। চীন থেকে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর দেশজুড়ে আতঙ্ক বাড়ছে। গত রোববার সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশি নাগরিক আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে চীন থেকে দেশে ফিরে লালমনিরহাটের এক শিক্ষার্থী জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকায় আনা হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর চীন থেকে আগতদের মাধ্যমে দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। চীন থেকে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর দেশজুড়ে আতঙ্ক বাড়ছে। গত রোববার সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশি নাগরিক আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে চীন থেকে দেশে ফিরে লালমনিরহাটের এক শিক্ষার্থী জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকায় আনা হয়েছে। তবে সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, ওই শিক্ষার্থীর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ মেলেনি। কিন্তু আইইডিসিআরের এ বক্তব্য সাধারণ মানুষকে আতঙ্কমুক্ত করতে পারছে না।

বিমানবন্দরে স্থাপিত হেলথ ডেস্কের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ লালমনিরহাটের ওই শিক্ষার্থী গত  রোববার চীন থেকে রাত ৮টায় ঢাকায় ফেরেন। বিমানবন্দরে পরীক্ষার-নিরীক্ষার পর তাকে ইমিগ্রেশন পার হতে হয়। শিক্ষার্থীর পারিবারিক সূত্র বলছে, বাসযোগে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথেই তার শরীরে ব্যথা ও বমি শুরু হয়। এরপর বাড়ি না নিয়ে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে গতকাল দুপুরে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর আপাতত চীনে যাতায়াত না করার কথা সরকার ভাবছে। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চীনের সঙ্গে যাতায়াত নয়, অন-অ্যারাইভাল ভিসা কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেন। এরপর কিছুটা কমে এলেও প্রতিদিনই চীন থেকে শত শত মানুষ দেশে প্রবেশ করছে। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আগে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চীন থেকে যাতায়াত করত। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর তা কিছুটা কমে এসেছে। তবে এখনও প্রতিদিন চীন থেকে গড়ে সাতশ’ মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

চীন থেকে আসা এসব মানুষের মাধ্যমেই দেশে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান সমকালকে বলেন, চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর তা আরও কয়েকটি দেশে ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। চীন থেকে প্রতিদিনই মানুষ আসছে। এটি নিঃসন্দেহে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কিন্তু চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, সেদিক বিবেচনা করলে যাতায়াত বন্ধ করা অত্যন্ত কঠিন। তবে এই ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটিও জানতে হবে। বিমানবন্দরে স্ট্ক্রিনিং ভালোভাবে করতে হবে। করোনাভাইরাসের লক্ষণ বিশেষ করে হাঁচি, কাশি ও জ্বর হলে তারা কোথায় যোগাযোগ করবেন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে হবে। মূল কথা কত দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ যেসব দেশের তালিকা করেছে, সেখানে প্রথম ২০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই। তবুও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশে এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক আছে। চীন থেকে বাংলাদেশে আসার পর যাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভালোভাবে করা হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রয়োজন না হলে আপাতত চীন থেকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ থেকে চীনে কারও যাতায়াত না করাই উত্তম।

সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাও এই ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে আছে বলে মনে করেন। গতকাল সোমবার আইইডিসিআর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ যে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের ঝুঁকিতে আছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলেই এটি মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো।

রংপুর অফিস ও লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাস সন্দেহে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া চীনফেরত শিক্ষার্থীকে গতকাল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. দেবেন্দ্র নাথ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, গত শনি ও রোববার করোনাভাইরাস সন্দেহে ভর্তি হওয়া দুই রোগীর কফ, লালা ও রক্ত সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। শনিবার ভর্তি হওয়া রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আইইডিসিআর থেকে তার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তার শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে রোববার রাতে ভর্তি হওয়া লালমনিরহাটের শিক্ষার্থীর শরীরে ব্যথা ও বমি হচ্ছিল। তার কিডনির অবস্থাও ভালো নয়। ক্রমশই পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছিল। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তারা ওই শিক্ষার্থীকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইইডিসিআরের দুই ধরনের তথ্য : গত ২৪ ঘণ্টায় বিদেশ থেকে বিমান, নৌ ও স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ১২ হাজার ৬৩০ জন যাত্রীকে স্ট্ক্রিনিং করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে ‘স্বাস্থ্য সচেতনতায় করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ৃব্দত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯০ হাজার ২৪৫ জন বিদেশফেরত যাত্রীর স্ট্ক্রিনিং করা হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৬৩০ জনকে স্ট্ক্রিনিং করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিমানবন্দরে ৬ হাজার ১৬২ জন, নৌবন্দরে ২৪০ জন এবং সমুদ্রবন্দরে ৬ হাজার ২২৪ জনকে স্ট্ক্রিনিং করা হয়েছে।

অন্যদিকে আইইডিসিআরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২১ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯০ হাজার ২৪৫ জন বিদেশফেরত যাত্রীকে স্ট্ক্রিনিং করা হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৬৩০ জন বিদেশফেরত যাত্রীকে স্ট্ক্রিনিং করা হয়। তাদের মধ্যে বিমানবন্দরে ৬ হাজার ১৬২ জন, নৌবন্দরে ২৪০ জন এবং স্থলবন্দরে ৬ হাজার ২২৪ জনকে স্ট্ক্রিনিং করা হয়।

মন্ত্রণালয় বলছে, ১ জানুয়ারি থেকে যাত্রীদের স্ট্ক্রিনিং করা হয়েছে। অন্যদিকে আইইডিসিআর বলছে, ২১ জানুয়ারি থেকে এটি করা হচ্ছে। আবার বন্দরের হিসাব লিখতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। নৌবন্দরে এক ধরনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আবার সমুদ্রবন্দর লিখে আরেক ধরনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

এর আগে গত রোববারও আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের মধ্যে স্ট্ক্রিনিং করা যাত্রীদের নিয়ে তথ্যগত ব্যবধান ছিল। দুটি বিভাগ থেকে দুই ধরনের তথ্য গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। তবে আইইডিসিআরের তথ্য ভুল ছিল বলে সংশ্নিষ্টরাও নিশ্চিত করেছেন।

করোনার ঝুঁকি আছে- আইইডিসিআর :  করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার আইইডিসিআর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, উৎপত্তিস্থল চীনের উহান রাজ্য থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা ৩১২ জনের সবাই সুস্থ আছেন। ১১ জনকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তারাও এখন সুস্থ আছেন। তাদের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হবে। এই মেয়াদ শেষে আগামী রোববার তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

চীনফেরত রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কারণে অনেক সময় যাচ্ছে। অর্থও ব্যয় হচ্ছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, চীনের সঙ্গে গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের ব্যাপক যাতায়াত আছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেও যাতায়াত আছে। সিঙ্গাপুরে প্রতিদিন বিমান যাতায়াত করছে। সুতরাং ঝুঁকি অবশ্যই আছে এবং সেইদিক বিবেচনা করেই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos