বাংলাদেশে এখন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা

বাংলাদেশে এখন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা

বিশ্বের অনেক ধনী দেশই যেখানে তাদের সীমান্ত থেকে হাজার হাজার শরণার্থীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ অসহায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। ছোট, জনবহুল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় থাকা দেশ হলেও মিয়ানমার থেকে হত্যা ও ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বেই

বিশ্বের অনেক ধনী দেশই যেখানে তাদের সীমান্ত থেকে হাজার হাজার শরণার্থীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ অসহায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। ছোট, জনবহুল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় থাকা দেশ হলেও মিয়ানমার থেকে হত্যা ও ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বেই তাই বাংলাদেশের প্রশংসা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত সপ্তাহেই এ বিষয়ে বাংলাদেশের ত্যাগ ও অবদান নিয়ে কথা বলেছেন। একই সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রধান জিম কং কিমকে নিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তিনি। এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বের অনেক জায়গায় যেখানে শরণার্থীদের জন্য দরজা বন্ধ, সেখানে ঠিকই বাংলাদেশ তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ নিজেই উন্নয়নশীল দেশ ও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা সত্ত্বেও ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে সহায়তা করে যাচ্ছে।’

এরপর তিনি বিশ্বের অন্যান্য দেশকে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। গত ২৮ জুন রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রায় ৫০ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই অর্থ রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজে লাগবে বলে জানান তারা। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘বাংলাদেশ এই মানবিক সংকট মোকাবিলায় দারুণ নেতৃত্ব ও দক্ষতা দেখিয়েছে। আমরা রোহিঙ্গাদের দুর্দশায় ব্যথিত। আমরা তাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে সহায়তা করতে প্রস্তুত।’ একইসঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনগণকে সহায়তাও করতে চান বলেও জানান তিনি। কিম বলেন, ‘কানাডার সরকারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখবে। ’গত কয়েক দশকে মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে তিন লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। আর গত আগস্টের পর পালিয়ে এসেছে আরও সাত লাখ। সব মিলে এখন বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস।

১০ লাখ রোহিঙ্গার খাদ্য ব্যবস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিদিন তাদের খাওয়াতে খরচ হয় প্রায় আট লাখ ডলার। সংস্থাটির বাংলাদেশস্থ পরিচালক ক্রিস্টা রাডের বলেন, ‘এত মানুষকে খাওয়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের কাছে মাত্র তিনটি খাবার আছে। ভাত, ডাল ও তেল। কিন্তু বছরের পর বছর মানুষ এগুলো খেয়ে থাকবে না। তাই আমরা ভিন্নতা আনার চেষ্টা করছি।’

রাডের বলেন, ‘ইলেক্ট্রনিক ভাউচারের মাধ্যমে ভিন্নতা আনা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘এই কার্ডগুলো প্রতি মাসে আপডেট হবে এবং অ্যাকাউন্টে ৭৫০ টাকা করে যোগ হবে। এতে দোকান থেকে ১৯ রকমের খাবার কেনা সম্ভব হবে তাদের।’
খাবার সরবরাহসহ সবকিছুতেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে সরকার। গত বছর সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের দেখাশোনা করবে। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি, তবে আরও ১০ লাখকে খাওয়াতে পারবো।’

ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কাজের ওপরে নজরদারি
খাবার ছাড়াও চিকিৎসা, পানিসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি সরকার নজর রাখছে কোনোভাবেই যেন রোহিঙ্গা শিবিরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম না চলে। কক্সবাজারের ডেপুটি কমিশনার কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন এই বিষয়ে গভীরভাবে নজর রাখছে।’ তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। এছাড়া, নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণে শরণার্থীদের মধ্যে এ পর্যন্ত কোনও সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের আলামত পাওয়া যায়নি। আশা করি পরিস্থিতি এমনই থাকবে।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘শরণার্থী শিবিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাঁচটি পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। পুরো অঞ্চলজুড়ে রয়েছে আরও ১৩টি চেকপোস্ট।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের গোয়েন্দারাও সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। সারাদেশ থেকে এনে গোয়েন্দাদের এখানে মোতায়েন করা হয়েছে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos