লতিফের শরীরে বঙ্গবন্ধুর মুখ!

লতিফের শরীরে বঙ্গবন্ধুর মুখ!

বঙ্গবন্ধুর ‘নতুন ছবি’ ‘আবিষ্কার’ করে আবারও আলোচনায় এলেন চট্টগ্রামের সেই বিতর্কিত এমপি এম এ লতিফ। এর আগে তিনি জামায়াত নেতা থেকে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। এরপর আলোচনায় আসেন ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’ নামের সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে। লতিফের ‘আবিষ্কার করা’ বঙ্গবন্ধুর নতুন এ ছবিতে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর পরনে লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবি

বঙ্গবন্ধুর ‘নতুন ছবি’ ‘আবিষ্কার’ করে আবারও আলোচনায় এলেন চট্টগ্রামের সেই বিতর্কিত এমপি এম এ লতিফ।

এর আগে তিনি জামায়াত নেতা থেকে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। এরপর আলোচনায় আসেন ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’ নামের সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে।

লতিফের ‘আবিষ্কার করা’ বঙ্গবন্ধুর নতুন এ ছবিতে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর পরনে লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবি ও ঢোলা পায়জামা এবং পায়ে কালো স্নিকার জুতা। এছাড়া দাঁড়ানোর ভঙ্গি মোটেও বঙ্গবন্ধুর নয়।

ছবির নিচে লেখা আছে- জনসংখ্যা আর নদ-নদী/বাংলাদেশের জীয়নকাঠি। তার নিচে লেখা- এম এ লতিফ এমপি।

এ ছবি চট্টগ্রামের অসংখ্য স্থানে ঝুলতে দেখা গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লতিফের ছবিতে বঙ্গবন্ধুর মুখ লাগিয়ে ওই ছবিটি ফটোশপে তৈরি করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যবহারকারীরা এটি লতিফের ছবিই বলে দাবি করেছেন।

তবে এ ছবি সম্পর্কে ‘কিছুই জানেন না’ বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন লতিফ এমপি।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ছবিটা সবাই দেখেছে।’ আবার প্রশ্নের মুখে বলেন, ‘আমাকে ছবিটা দেখতে হবে আবার।’ তিনি আর সবার মতোই ছবিটি বঙ্গবন্ধুর বলেই মনে করেছেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সফর করেন। সে উপলক্ষেই লতিফ এমপি বঙ্গবন্ধুর ওই তৈরি করা ছবি সম্বলিত পোস্টার টানান চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যে বিষয়ে আমি জানি না, তা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।’

অন্যদিকে লতিফ এমপি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগিয়ে আমার বেনিফিট (লাভ) কী? প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে আমার ছবি লাগালে আমি বেনিফিট পেতাম। সবাইতো লাভের জন্যই কাজ করে। অহেতুক বিতর্ক তৈরি করতে এসব কথা বলা হচ্ছে।’

তিনি প্রশ্ন করেন- ‘আমি যে ওই পোস্টার করেছি তার প্রমাণ কী? পোস্টারের নিচে তার নাম লেখা আছে জানালে তিনি বলেন, ‘ওখানে তো আমি কবিতার দুটো লাইন দিয়েছি। কিন্তু আমি যদি বেনিফিটেড হতে চাইতাম, তাহলে আমার ছবিই দিতাম, বঙ্গবন্ধুর ছবি না।’

ছবিটা দেখেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছবি তো রাস্তার ওপরেই আছে, কেন দেখবো না।’

ছবিটা বঙ্গবন্ধুর কি না- জানতে চাইলে বলেন, ‘এগুলোতো আমি করি নাই, আমরা অর্ডার দিছি, তারা প্রিন্ট করে দিছে। ওদেরকে বলেছি, বঙ্গবন্ধুর ছবি করে দাও। ওরা কী করেছে সেটা আমি কেমনে জানবো। আমিতো আমার কাজে ব্যস্ত আছি।’ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমি কী কারণে এটা করবো।’

এরপর বলেন, ‘এটা নেত্রী দেখে গেছেন। রাস্তা দিয়ে যাওয়া লোকজন দেখতেছে। এটা কি লুকানো কিছু? যারা এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠাইতেছে তাদের আপনি জিজ্ঞেস করেন, কেন এটা করবো।’
যেহেতু পোস্টারে আপনার নাম আছে, আপনি কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না, জানতে চাইলে বিতর্কিত এই এমপি বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি, চট্টগ্রাম গিয়ে ছবি দেখে তারপর আমি বলতে পারব।’

আপনি তো ছবিটা দেখেছেন, তাহলে আবার কেন দেখতে হবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি যেভাবে বলতেছেন, সেভাবে আমি দেখি নাই। আমিতো সবার মতোই দেখছি ওটা বঙ্গবন্ধুর ছবি।’

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আকন্দ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রতরণা মামলার ৪০৬ এবং ৪২০ ধারায় মামলা করা যায় এবং একই সঙ্গে এটি মানহানির মামলাও বলা যায়।’

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনের অন্যতম কর্মী সাগর লোহানী এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে যে এতো বড় জালিয়াতি করতে পারে, তার বিচার বাংলার মাটিতে করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধী বা বঙ্গবন্ধুর কোনও শত্রুও বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে এমন জালিয়াতি করার সাহস করে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই লতিফ জামায়াতের একজন নেতা। তিনি হঠাৎ করেই ২০০৮ সালের নির্বাচনের ১৫ দিন আগে আওয়ামীলীগার হয়ে ওঠেন। অথচ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামে জামায়াত নেতাদের সঙ্গেই তার সখ্য ছিল। তার সম্পর্কে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।’

উল্লেখ্য, আগামী ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনার প্রতীকী বিচার করার লক্ষ্যে গঠিত ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’ নামের সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের মঞ্চে সাংবাদিক আবেদ খানের পাশে বসেছিলেন এম এ লতিফ। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম ১১ আসনের সংসদ সদস্য এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, নৌ-পরিবহন ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। জামায়াত সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে- মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনাদের নির্যাতন কেন্দ্র চট্টগ্রাম ডালিম হোটেলের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী মওলানা শামসুদ্দিনের কাছের লোক ছিলেন লতিফ।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos