ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে সুইস ঘড়ির বিক্রি কমছে

ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে সুইস ঘড়ির বিক্রি কমছে

অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তনের প্রভাব শুধু চীন বা ভারতের মতো দেশে সীমাবদ্ধ নয়, বরং উন্নত দেশগুলোও এর বেশ ফলভোগ করছে। বিশেষ করে সুইজারল্যান্ডের মতো বিলাসবহুল পণ্য নির্মাতাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি বড় এক ধাক্কা হিসেবে কাজে লাগছে। চলতি বছরের আগস্টে হোয়াইট হাউস সুইস পণ্যের উপর ৩৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুইস

অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তনের প্রভাব শুধু চীন বা ভারতের মতো দেশে সীমাবদ্ধ নয়, বরং উন্নত দেশগুলোও এর বেশ ফলভোগ করছে। বিশেষ করে সুইজারল্যান্ডের মতো বিলাসবহুল পণ্য নির্মাতাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি বড় এক ধাক্কা হিসেবে কাজে লাগছে। চলতি বছরের আগস্টে হোয়াইট হাউস সুইস পণ্যের উপর ৩৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুইস দেশের বড় বাণিজ্য উদ্বৃত্তের জন্য নেওয়া হয়। তবে এর বিপরীতে সুইস সরকার পাল্টা শুল্ক আরোপ না করে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখনও কোন চূড়ান্ত সমঝোতা সম্ভব হয়নি।

শুল্কের সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে সুইস বিলাসবহুল ঘড়ি শিল্পে। বিশ্বখ্যাত ব্রাইটলিং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জর্জ কের্ন বলেন, ‘৩৯ শতাংশের শুল্ক ছিল একেবারেই ভয়াবহ, এটি প্রকৃতপক্ষে বিপর্যয়কর। সুইস রাজনীতিকেরা এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না এবং তারা বুঝতেই পারেননি, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কীভাবে দর কষাকষি করতে হয়।’

শুল্কের প্রভাব সামাল দিতে ব্রাইটলিং কোম্পানি বিশ্বজুড়ে ঘড়ির দাম গড়ে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে একটির গড় মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ হাজার ২শ ডলার। দাম বাড়ার সাথে সাথে বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে, যা সুইস ঘড়ির অন্যতম বড় ক্রেতা। ফেডারেশন অব দ্য সুইস ওয়াচমেকিং ইন্ডাস্ট্রির তথ্যমতে, ২০২৪ সালের আগস্টে সুইস ঘড়ি রপ্তানি ১৬.৫ শতাংশ কমে গেছে। সেপ্টেম্বরেও রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ৩.১ শতাংশ। প্রথমে এপ্রিল ও জুলাই মাসে সম্ভাব্য শুল্ক ঘোষণা উলম্বে, রপ্তানি কিছুটা বেড়েছিল, তবে আগস্টে তা হঠাৎ ৫৬ শতাংশ কমে যায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি কমলেও, যুক্তরাজ্য ও জাপানে রপ্তানি কিছুটা বাড়ছে।

বিলাসবাজারে চলমান এই মন্দার কারণে ব্রাইটলিংয়ের প্রধান নির্বাহী কের্ন বলেছেন, মহামারী, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যস্ফীতি ও চীনের অর্থনৈতিক স্থবিরতা এই শিল্পে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করেছে। তবে তিনি আশাবাদী, কারণ কিছু চীনা বাজারে গত কয়েক মাসে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে। তিনি বলছেন, ‘চীনে বিক্রির ধারা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে এবং বাজারকে স্থিতিশীল হওয়ার পথে দেখা যাচ্ছে।’

বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনসহ অন্যান্য বাজারে কিছুটা সুস্থিরতা বিরাজ করতে শুরু করেছে, যা দীর্ঘমেয়াদি ভিশনে ইতিবাচক। লুকা সোলকা, বার্নস্টাইন গ্লোবাল লাক্সারি গুডসের কর্মকর্তা, বলেছেন যে চীনা ক্রেতাদের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই ধারা যদি ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে, তবে বলে যেতে পারে যে চীনের বাজার আবার ‘ইউ-আকৃতির’ পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।

তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, বিলাসী পণ্যের বাজার কোনো সময়ই পুরোপুরি অবদান রাখতে পারে না। ক্রেতারা যেহেতু ঘড়ি বেশিরভাগই খুব ঘনঘন কেনে না, সেই কারণে কিছু সময়ের জন্য এই শিল্প কম তরতাজা হয়ে উঠবে। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত কোভিড-উত্তর সময়ে অনেকেই ইতিমধ্যে বা আরেকটু পরে এই ধরনের পণ্য কিনে ফেলেছেন। অন্যদিকে, কের্ন বিশ্বাস করেন যে, দীর্ঘমেয়াদি বাজারে বড় ধরনের মন্দার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পুনরুজ্জীবনের আশা দেখা যাচ্ছে এবং ক্রেতাদের মনোভাবও ইতিবাচক। এমতাবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার বাজারেও বিক্রির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে।’

করুণ সামগ্রিক দৃষ্টিতে, কের্ন বলেন, ‘মানুষের স্বভাবজাত আশাবাদ আর বিলাসের প্রতি ভালোবাসা কখনোই শেষ হয় না। বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের প্রবণতা, এবং এই শিল্পের ভবিষ্যত খুবই আকর্ষণীয় বলেই মনে হচ্ছে।’

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos