সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৩৬ শতাংশে

সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৩৬ শতাংশে

দেশের বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে সবজির দাম দ্রুত বেড়ে গেছে, যেখানে কিছুদিন আগে ১০০ টাকার কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। এর ফলে সাধারণ নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অপ্রতুল হয়ে পড়েছে বাজারে। আলু সহ প্রায় সব ধরণের সবজি এখন ক্রেতাদের জন্য বাইরে যায়গা করছে। ভালো উৎপাদন থাকলেও চালের দাম কমার কোনও লক্ষণ

দেশের বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে সবজির দাম দ্রুত বেড়ে গেছে, যেখানে কিছুদিন আগে ১০০ টাকার কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। এর ফলে সাধারণ নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অপ্রতুল হয়ে পড়েছে বাজারে। আলু সহ প্রায় সব ধরণের সবজি এখন ক্রেতাদের জন্য বাইরে যায়গা করছে। ভালো উৎপাদন থাকলেও চালের দাম কমার কোনও লক্ষণ নেই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ ভোক্তা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে এই সূচক দাঁড়িয়েছে ৮.৩৬ শতাংশে, যা গত আগস্টে ছিল ৮.২৯ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র এক মাসের ব্যবধানেই মূল্যস্ফীতি ০.০৭ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়।

এখনকার মূল্যস্ফীতি মানে— ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে একটি পণ্য ১০০ টাকা দরে কেনা যেত, সেখানে ২০২৫ সালে একই পণ্য বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকা ৩৬ পয়সায়। অর্থাৎ মূল্যের এই বৃদ্ধির ফলে এক বছর আগে যেখানে সাধারণ মানুষ ১০০ টাকা দিয়ে যা কিনতে পারতেন, এখন সেই পণ্য কিনতে অন্তত ৮ টাকা ৩৬ পয়সা বেশি খরচ হচ্ছে।

তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১০ শতাংশের বেশি। তবে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে দৈনন্দিন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা 위한 লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬.৫ শতাংশের মধ্যে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির মাধ্যমে এই লক্ষ্য পূরণে চেষ্টা করে যাচ্ছে, তবুও অর্থনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই লক্ষ্য অর্জন এখনো কঠিন।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ৭.৬৪ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৭.৬ শতাংশ। অন্যদিকে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামও বেড়ে হয়েছে ৮.৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ, দুই ক্ষেত্রেই পণ্যমূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে শহুরে এলাকার তুলনায় জীবনযাত্রার খরচ বেশি বেগে বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামীণ অর্থনীতির মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৪৭ শতাংশ, যেখানে শহরে তা ৮.২৮ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যগুলোর মূল্যবৃদ্ধির হার গ্রামের তুলনায় শহরে কম নয়।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গ্রামে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ৭.৫৪ শতাংশ, আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯.৪ শতাংশ। অন্যদিকে শহরে এই হার যথাক্রমে ৭.৯৪ এবং ৮.৫১ শতাংশ। ঘরোয়া ও শহুরে বাজারের এই পার্থক্য স্পষ্ট করে দিচ্ছে, গ্রামে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় এই বছরের একই সময়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে ১.৫৬ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯২ শতাংশ, আর এই বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৩৬ শতাংশে। খাদ্যখাতে গত বছর ছিল ১০.৪০ শতাংশ, আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯.৫০ শতাংশ।

অন্যদিকে, ২০২৩ সালে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৩ শতাংশ, যার মধ্যে খাদ্যে ছিল ১২.৩৭ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৭.৮২ শতাংশ। আর ২০২২ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৯.১০ শতাংশ, খাদ্যে ৯.০৮ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯.১৩ শতাংশ।

আঞ্চলিক তুলনায় দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশই বাংলাদেশের তুলনায় কম মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি। ভারতে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ২.৭ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫.৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১.৫ শতাংশ, নেপালে ১.৬৮ শতাংশ, আফগানিস্তানে ২.২ শতাংশ, মালদ্বীপে ৪.৬ শতাংশ এবং ভুটানে ৩.৬ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকলেও, দেশের ভেতর সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা, পরিবহন খরচ এবং বাজার ব্যবস্থাপনার কমতি কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছেনা। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ আরও বেড়ে চলেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos