দীর্ঘদিন ধরে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান হলো তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। এই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে জাতির গুরুত্বপূর্ণ এই সমস্যার সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাতদফা কার্যকর পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, রেখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। ড. ইউনূস আরও বলেন, অর্থায়ন
দীর্ঘদিন ধরে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান হলো তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। এই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে জাতির গুরুত্বপূর্ণ এই সমস্যার সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাতদফা কার্যকর পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, রেখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। ড. ইউনূস আরও বলেন, অর্থায়ন কমে গেছে, ফলে এখনই হাত গুটিয়ে থাকা যাবে না; বরং নিজের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে আনাই একমাত্র পথ। তিনি এই মত প্রকাশ করেন, গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে। ড. ইউনূস বলেন, ‘অষ্টম বছরেও গণহত্যার পর রোহিঙ্গাদের দুর্দশা কোনোভাবেই কমেনি। সংকটের সমাধানে কার্যকর প্রচেষ্টা নেই, আন্তর্জাতিক অর্থায়নও মারাত্মক ঘাটতিতে ভুগছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, এই সংকটের মূল উৎস হলো মিয়ানমার, এবং এর সমাধানও এখানেই নিহিত। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ বাড়াতে হবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। ড. ইউনূস দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘এটাই এই সংকটের একমাত্র স্থায়ী সমাধান। মিয়ানমারকে সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে জিম্মি করে রাখার অবকাশ নেই।’ তিনি উল্লেখ করেন, প্রত্যাবাসনে এত কম সম্পদ লাগবে যে, এটা খুবই অর্থপূর্ণ। রোহিঙ্গারা সব সময়ই নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চেয়েছে। তিনি জানান, সম্প্রতি সংঘটিত সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা যেন দ্রুত ফেরত যায়, তার উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, বাংলাদেশও এই পরিস্থিতির শিকার। তিনি বলেন, ‘আমরা সামাজিক, পরিবেশ ও অর্থনৈতিকভাবে বিপুল চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’ ড. ইউনূস আরও যোগ করেন, ‘রোহিঙ্গাদের অবাধ গতিবিধি এবং তাদের মাধ্যমে মাদক ও অপরাধমূলক কার্যক্রমের কারণে বাংলাদেশের সামাজিক বন্ধন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য বেকারত্ব ও দারিদ্র্য মোকাবেলা করতে হলে এসব বিষয় গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে।’ তিনি এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য সাত দফা পদক্ষেপের প্রস্তাব দেন: এক, রেখাইন অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি; দুই, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ ও দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু; তিন, রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণে বেসামরিক আন্তর্জাতিক উপস্থিতি নিশ্চিত; চার, রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজে সম্পৃক্ত করতে আস্থা বাংলাদেশে গড়ে তুলতে প্রকল্প নেওয়া; পাঁচ, অর্থদাতাদের সহায়তা নিয়ে যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন; ছয়, জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা; সাত, মাদক অর্থনীতির দমন, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, বিশ্ব এখন আর অপেক্ষা করতে পারে না। চারপাশের পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, সময় এসেছে সবাই একযোগে কাজ করার। বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। তিনি সব দেশ ও সংগঠনের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আজকের দিন এ সংকটের সমাধানে ঐক্যবদ্ধ কাজের অঙ্গীকার করার দিন।’ সূত্র: বাসস