ফিলিস্তিনের গাজা, লেবানন, ইরান থেকে শুরু করে ইয়েমেন—প্রায় সবখানেই সামরিক অভিযান চালিয়ে এখন কার্যত আঞ্চলিক অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ইসরায়েল। সম্প্রতি কাতার রাজধানী দোহায় বিমান হামলা চালানোর পর এই আলোচনাগুলোর ব্যাপক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এরপরই তুরস্কের দিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উৎকণতা বেড়ে গেছে। তুর্কি কূটনীতিক মহলে এখন প্রশ্ন উঠছে—ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট কি তবে তুরস্ক হতে পারে?
ফিলিস্তিনের গাজা, লেবানন, ইরান থেকে শুরু করে ইয়েমেন—প্রায় সবখানেই সামরিক অভিযান চালিয়ে এখন কার্যত আঞ্চলিক অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ইসরায়েল। সম্প্রতি কাতার রাজধানী দোহায় বিমান হামলা চালানোর পর এই আলোচনাগুলোর ব্যাপক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এরপরই তুরস্কের দিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উৎকণতা বেড়ে গেছে। তুর্কি কূটনীতিক মহলে এখন প্রশ্ন উঠছে—ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট কি তবে তুরস্ক হতে পারে?
বিশ্লেষকদের মতে, গত সপ্তাহে কাতারকে লক্ষ্য করে আক্রমণের পর তুরস্কের দিকে নজর ঘুরে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসিত গবেষণা সংস্থা আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটির জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল রুবিন সতর্ক করে বলেছেন, হয়তো খুব শিগগিরই তুরস্কই হবে ইসরায়েলের পরবর্তী শত্রু। তিনি আরও বলেছেন, ন্যাটো সদস্যপদ থাকলেও তা এই হুমকি থেকে তুরস্ককে রক্ষা করতে পারবে না।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিশ্লেষক মেইর মাসরি সোশ্যাল মাধ্যমে লেখেছেন, ‘আজ কাতার, কাল তুরস্ক।’ এর জোরদার প্রতিক্রিয়ায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি ইসরায়েল তুরস্কের ওপর আক্রমণের কথা ভাবেও sheltersэс, তবে দেশের প্রতিশোধ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।
আমেরিকা ও ন্যাটো এই বিষয়গুলোতে কিছু বলছে না বলেই মনে করা হচ্ছে, যা তুরস্কের জন্য উদ্বেগ তৈরি করছে। এক বিশ্লেষক ওমর ওজকিজিলসিক জানিয়েছেন, তুরস্ক বুঝতে পেরেছে যে দেশের নিরাপত্তা কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর ওপর নির্ভর করলে চলবে না। তিনি মনে করছেন, ইসরায়েল সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ওয়াশিংটনের নীরব সমর্থনও রয়েছে।
একই zamanda, ইসরায়েল প্রধান নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণার পক্ষে স্পষ্টভাবে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন। তাঁর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘অবশ্যই, আমি এই ধারণায় বিশ্বাস করি।’’. এই মনোভাবের কারণেই তুরস্ক এই বিষয়কে খুবই গুরুতর ভাবে নিচ্ছে। এর একটু পেছনে মনে করা হচ্ছে, হুমকি হিসেবে দেখছে আঞ্চলিক শক্তির সমন্বয়ে এই পরিকল্পনাকে।
তবে যেহেতু ইসরায়েল শুধু গাজা বা পশ্চিম তীরই নয়, সিরিয়া, ইয়েমেন ও তিউনিসিয়া থেকেও সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, ফলে পুরো অঞ্চল এক নতুন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে পৌঁছোতে যাচ্ছে। সিরিয়ায় হামলা, হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে আঘাত, ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষ—সব মিলিয়ে ইসরায়েল এখন আঞ্চলিক আধিপত্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মূল লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক শক্তি প্রতিষ্ঠা। বিতর্কিতভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক কূটনীতিবিদ টম বারাক বলেছেন, ইসরায়েল কখনোই একটি একক এবং শক্তিশালী সিরিয়া চায় না। সিরিয়া ও লেবাননে মনোবল ভেঙে দেওয়া, ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনের পথ সুগম করছেন তারা।
অবশ্য, তুরস্কের পক্ষ থেকে সাবেক নৌঅ্যাডমিরাল সেম গুরদেনিজ মনে করেন, প্রথম সরাসরি সংঘর্ষের সম্ভাব্য ক্ষেত্র হবে সিরিয়ার আকাশ ও ভূখণ্ড। তাঁর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সাইপ্রাসে গড়ে তোলা সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটিগুলো তুরস্কের ব্লু হোমল্যান্ড কৌশলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
অতঃপর, বর্তমানে তুরস্ক-ইসরায়েল সম্পর্কের অবনতি ধারাবাহিকভাবে দেখা যাচ্ছে। ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণা, কাতারে সামরিক হামলা, সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তার এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় প্রতিযোগিতা—এসব মিলিয়ে আঙ্কারা মনে করছে ইসরায়েল আর শুধু প্রতিবেশী নয়, এর লক্ষ্য হচ্ছে আঞ্চলিক একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন।
এদিকে, তুরস্কও তার সামুদ্রিক ও কূটনৈতিক শক্তি বাড়িয়ে, সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে, এই দুই দেশের সম্পর্ক কোন পথে এগোবে, তা এখন তেলমন রাজনীতির বড় এক সংকটের মুখোমুখি।