নেপালে সরকার পতনের জন্য তরুণদের আন্দোলন দেশের সীমা ছাড়ালো

নেপালে সরকার পতনের জন্য তরুণদের আন্দোলন দেশের সীমা ছাড়ালো

নেপালে জনজাগরণ ও ভোটারদের ক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত পতন হলো কেপি শর্মা অলি সরকারের। মাত্র দুই দিনের ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলনের চাপেই তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এটি কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়; বরং প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় সরকারের পতনের ধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে নেপালের তরুণরা নতুনভাবে শক্তি নিইয়ে এই কঠোর আন্দোলনে নেমেছিলেন। সোমবারের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ

নেপালে জনজাগরণ ও ভোটারদের ক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত পতন হলো কেপি শর্মা অলি সরকারের। মাত্র দুই দিনের ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলনের চাপেই তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এটি কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়; বরং প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় সরকারের পতনের ধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে নেপালের তরুণরা নতুনভাবে শক্তি নিইয়ে এই কঠোর আন্দোলনে নেমেছিলেন।

সোমবারের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলের মাধ্যমে দুর্নীতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক দুর্বিষহ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বার্তা দেন তরুণেরা। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও ব্যাপকভাবে অংশ নেন। তাদের দাবি, এই প্রতিবাদ ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন ও অরাজনৈতিক, যেখানে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সরাসরি প্রভাব ছিল না। আর এটাই ছিল এই আন্দোলনের অন্যতম শক্তির উৎস।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ২৭ বছর বয়সি ছাত্র আয়ুষ বাসায়াল বলেন, “জনসমাগম অনেক বিশাল হলেও কিছু অসাধু চিহ্নিত ব্যক্তি মোবাইল ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন। তারা পার্লামেন্ট ভবনের দিকে এগিয়ে যায়, যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।” আবার শুরুর কিছু সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি খুবই অস্থীর হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীর ওপর টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়, অনেকে আশ্রয় নিতে পারেন পাশের গলিগুলিতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বছর কয়েক ধরে চলমান দুর্নীতি এবং সামাজিক সমস্যা নেপালীর মনে ক্ষোভের তীব্র আঘাত করেছে। ২০১৭ সালে এয়ারবাস দালালের মাধ্যমে নেপাল এয়ারলাইনস ২টি এ-৩৩০ উড়োজাহাজ কিনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে ধাক্কা দেয়। তদন্তের পরে কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও জনসাধারণের ক্ষোভ কমেনি।

অন্যদিকে, তরুণদের মনে এক শ্বাস প্রশ্বাসের অপেক্ষা ছিল দুর্নীতি ও অপচয়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে। তারা মনে করেন, কর দিতে হয়, কিন্তু সেই করেরও সঠিক ব্যবহার হয় না। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্নীতির ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ফলে তরুণদের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়।

প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক সরকার পতনের আন্দোলন থেকে তারা অনুপ্রেরণা সংগ্রহ করেছেন। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশে তরুণেরা নেতৃত্ব দিয়ে সরকারকে পতন ঘটিয়েছে। ফিলিপাইনে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যাওয়াও নেপালের ক্ষোভে ইন্ধন জুগিয়েছে।

অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন অংশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্তও তরুণদের অনুভূতিকে আরও ক্ষুণ্ণ করেছে। দেশের মাথাপিছু আয় মাত্র ১,৩০০ ডলার হওয়া অবস্থাতেও এই বৈষম্য ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে।

গেল মাসের ৪ সেপ্টেম্বর, নেপাল সরকার বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের ঘোষণা দিলে তরুণদের ক্ষোভ দ্বিগুণ হয়ে যায়। পোখারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক যোগ রাজ লামিছানে বলেন, ‘এই আন্দোলনের মূল চেতনা হলো ন্যায়, জবাবদিহিতা ও সত্যের দাবি। দীর্ঘদিন ধরে তরুণরা উপেক্ষিত, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত তাদের হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে নিয়ে গেছে।’

২০১৫ সালে যুব আন্দোলনের সূচনা করে সংগঠন ‘হামি নেপাল’ এই আন্দোলনের কাণ্ডারী। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসনের অনুমতির ভিত্তিতে তারা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছিলেন। তবে, পার্লামেন্টের প্রাঙ্গণে প্রবেশের চেষ্টার সময় পুলিশ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করে। এতে কমপক্ষে ১৯ জন প্রাণ হারান এবং পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

শেষমেশ, ২০২৩ সালের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগের ঘোষণা দেন, যা দেশের সাধারণ মানুষের স্বস্তি ও আশার আলো সৃষ্টি করে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos