গাজা সিটির নতুন এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংকের অভিযান

গাজা সিটির নতুন এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংকের অভিযান

ফিলিস্তিনের গাজা সিটির গভীর অভ্যন্তরে নতুন করে ইসরায়েলি সেনা ও ট্যাংক প্রবেশ করেছে। এই অভিযান চালিয়ে তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে, যার ফলে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন আস্তানার বাসিন্দারা। ইসরায়েল সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা গাজা সিটিকে দ্রুত খালি করে দিতে বলছে, কারণ তারা এই শহরটি সম্পূর্ণভাবে দখল করে নিতে প্রস্তুতি

ফিলিস্তিনের গাজা সিটির গভীর অভ্যন্তরে নতুন করে ইসরায়েলি সেনা ও ট্যাংক প্রবেশ করেছে। এই অভিযান চালিয়ে তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে, যার ফলে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন আস্তানার বাসিন্দারা। ইসরায়েল সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা গাজা সিটিকে দ্রুত খালি করে দিতে বলছে, কারণ তারা এই শহরটি সম্পূর্ণভাবে দখল করে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

গাজা সিটির বাসিন্দাদের মতে, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ইসরায়েলের সামরিক ট্যাংকগুলো গাজার উত্তর প্রান্তের ইবাদ-আলরহমান এলাকায় ঢুকে গোলাবর্ষণ করে, এতে অনেক মানুষ আহত হয়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বাড়িঘর ও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তারা আতঙ্কে থাকছেন। একজন ৬০ বছর বয়সী বাসিন্দা সাদ আবেদ বললেন, ‘আবাদের আলরহমানে ট্যাংক ঢুকেছে এমন খবর পেয়ে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বিস্ফোরণের শব্দ আর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। মানুষ আমাদের এলাকায় পালিয়ে আসছে, যদি যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে আমাদের বাড়ির সামনে পড়ে যাবে ট্যাংক।’

ইসরায়েল তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা সিটিকে সম্পূর্ণরূপে খালি করার জন্য কঠোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা দাবি করেছে, এই শহরটি হুঁশিয়ারি হিসেবে। তাদের মতে, গাজা খুব শীঘ্রই দখলে নিয়ে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে।

অপরদিকে, গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে, শহর ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা এই সিদ্ধান্তে অ steamed থাকছেন না। তারা বলছেন, দক্ষিণে পালানো মানে নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা, কারণ এই অঞ্চলে অমানবিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এছাড়া, ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেয়ি জানিয়েছেন, গাজা শহর খালি করার প্রক্রিয়া অবশ্যম্ভাবী। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, দক্ষিণের বিশাল এলাকাগুলো এখন ফাঁকা, মধ্যাঞ্চলের আশ্রয়শিবিরগুলোতেও পর্যাপ্ত স্থান রয়েছে।

বিশ্বের প্রথম সারির কূটনীতিক ও পশ্চিমা দেশগুলোও এই পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এই সপ্তাহেই, যেখানে বর্তমান পরিস্থিতি ও যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেছেন যে, এই বছরই সংক্ষিপ্ত এক যুদ্ধের ইতি ঘটবে বলে প্রত্যাশা তাঁদের।

অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সারের সাথে বৈঠক করেছেন। এই আলোচনা চলছে যখন, গাজার প্রান্ত থেকে ইসরায়েলি ট্যাংক পুনরায় জাবালিয়া এলাকায় ফিরে এসেছে। তাদের অভিযান অব্যাহত থাকলেও একই সময়ে গাজার পূর্বাঞ্চলের শেজাইয়া, জেইতুন ও সাবরা এলাকায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখনো কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে এক শিশু রয়েছে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস এবং হামাসের যোদ্ধাদের নির্মূল’ করার জন্য কাজ করছে। গত ২২ আগস্ট পশ্চিম গাজার নিরাপত্তা গোয়েন্দা প্রধান মাহমুদ আল-আসওয়াদকে হত্যা করার কথা তারা স্বীকার করেছে, যদিও হামাস এই খবর নিশ্চিত করেনি।

অবস্থার মধ্যে জেরুজালেমের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভও জোরালো হয়ে উঠেছে। এই সপ্তাহে ইসরায়েলব্যাপী হাজার হাজার মানুষ গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তির দাবি জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।

তবে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ৬০ দিনব্যাপী যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েল এখনও সাড়া দেয়নি, যদিও হামাস এরই মধ্যে এই প্রস্তাবের সঙ্গে সম্মতি জানিয়েছে।

৮ অক্টোবর হামাসের জঙ্গি সদস্যরা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যায়। এর পাল্টা জবাবে ইসরায়েল গাজার ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালাচ্ছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ইতিমধ্যে নিহতের সংখ্যা ৬২ হাজারের বেশি হয়ে গেছে। যুদ্ধ চালানোর ফলে পুরো অঞ্চল উপকূলীয় ও শহরগুলোতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যেখানে প্রায় সব পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত।

গাজায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বহু ধর্মীয় স্থাপনা ও ধর্মীয় নেতা-ইমামের উপর ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার জন্যও নজর দেওয়া হচ্ছে। ২৩৩ জন ইমাম ও ইসলাম ধর্মের প্রচারককে হত্যা করা হয়েছে, হাজার হাজার মসজিদ ও চার্চ ভেঙে পড়েছে।

মসজিদ, গির্জা ও ধর্মীয় নেতাদের ওপর এই হামলার লক্ষ্য যাতে ধর্মীয় শান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনাশ করা, সে বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশ্লিষ্টরা। ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে বহু ধর্মীয় স্থান ও ইতিহাসের স্থাপনা, যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

গাজায় অাহারে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অবরোধ ও হামলার কারণে গাজাজুড়ে দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট ও দুর্ভিক্ষ। অনাহারে ও অপুষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে আরও কয়েকজনের। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজার পরিস্থিতি এখন মানবিক দুর্যোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যেখানে জীবন রক্ষাকারী সহায়তার প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos