নওগাঁয় তিন বছরেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা, বাস্তব পরিস্থিতি জটিলতা ও দুর্ভোগের মোড়ে

নওগাঁয় তিন বছরেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা, বাস্তব পরিস্থিতি জটিলতা ও দুর্ভোগের মোড়ে

নওগাঁয় তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনও সম্পন্ন হয়নি শহরের মূল আর্থিক ও সামাজিক গুরুত্ব বহনকারী নওগাঁ-বদলগাছি আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। এই দীর্ঘ সময়ে কাজের অগ্রগতি বাধা পেয়েছে বিভিন্ন জটিলতায়, যার মধ্যে অন্যতম হলো জমি ও স্থাপনা সরানো বাবদ ১০ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া ঝামেলা। ফলে অনেক জায়গায় কাজ পুরোপুরি শেষ

নওগাঁয় তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনও সম্পন্ন হয়নি শহরের মূল আর্থিক ও সামাজিক গুরুত্ব বহনকারী নওগাঁ-বদলগাছি আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। এই দীর্ঘ সময়ে কাজের অগ্রগতি বাধা পেয়েছে বিভিন্ন জটিলতায়, যার মধ্যে অন্যতম হলো জমি ও স্থাপনা সরানো বাবদ ১০ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া ঝামেলা। ফলে অনেক জায়গায় কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় সাধারণ পরিবহন ও চলাচলকারীর মধ্যে সীমাহীন দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তিন বছর পার করে গেলেও এখনও তাদের ক্ষতিপূরণের অর্থ পাইনি।

জানা গেছে, শহরের বরুনকান্দি ও ঠেংভাঙার মোড় থেকে কীর্ত্তিপুর পর্যন্ত প্রায় ৬৮০ জন জমির মালিকের দাবি, তাদের কাছে মোট ক্ষতিপূরণের জন্য ৬২ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বলছে, ওই টাকা থেকে ১০ শতাংশ কাটার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও সড়ক বিভাগের নির্দেশনায় এক উপজেলার উপরে-নিচে জটিলতা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সরাসরি স্থাপনা সরানোর জন্য এই কাটা চালু রাখা হয়েছে, তবে এই সিদ্ধান্তকে নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা সরাসরি মানতে চাননি। ফলে টাকা পেতে অনিশ্চয়তা ও ঝামেলা আরও বাড়ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নানা জটিলতার মধ্যে পড়ে গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও অবিরাম কাজ বন্ধ রেখেছে।

নওগাঁ সড়ক বিভাগের সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় মোট ১৯টি প্যাকেজে বিভিন্ন রাস্তার প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজের আওতায় শহরের বালুডাঙ্গা ও বরুকান্দি মোড় থেকে কীর্ত্তিপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫৪ কোটি টাকা, এবং ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাজের দায়িত্ব নেওয়া হয় মেসার্স জামিল ইকবাল লিমিটেড নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। প্রশস্তকরণের সময় বেশ কিছু জমি ও স্থাপনা পড়ায়, সেগুলোর পৃথক মূল্য ধার্য ও অধিগ্রহণ করা হয়।

সড়ক বিভাগ জানাচ্ছে, ক্ষতিপূরণের ৬২ কোটি টাকার পুরো টাকা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা এই অর্থ পাননি কারণ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জমি ও স্থাপনা ক্ষতিপূরণের জন্য কিছু জমা না দেওয়ায় অজুহাতে কাজের অগ্রগতি বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা বলছেন, তিন বছর পার হলেও তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা এখনও হাতে পাননি। তারা জানান, জমি থেকে স্থাপনা সরানোর জন্য ১০ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়ায় সৃষ্টি হয় জটিলতা। নানা রকম জটিলতার কারণে তাঁরা তাদের পাওনা অর্থের জন্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনও সমাধান পাননি। দেড় মাস আগে আশ্রয় হিসেবে মাত্র একজনের নামে চেক দেওয়া হলেও তারপর থেকে কোনও অগ্রগতি হয়নি।

আল মামুন নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক বলেন, ‘পেছনের দেড় বছর ধরেই ১০ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমস্যা চলছে। আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। এই নিয়ম জেলাতেও নেই। আমরা দীর্ঘ দুই বছর ধরে এ বিষয়টি দেখছি, কিন্তু এখনও কোনও টাকা পাইনি। দ্রুত এই জটিলতা নিরসন করে আমাদের পাওনা টাকা দিতে চাই।’

জাহাঙ্গীর আলম, জিল্লুর রহমানসহ আরো কয়েকজন মালিক জানান, তাঁদের সব কাগজপত্র সঠিকভাবে সম্পন্ন হলেও টাকার জন্য বারবার ধরা হওয়া হয়। ট্রাক, বাসের চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তার এই অবস্থা অনেক দিন ধরে। সমস্যার কোনও সমাধান হচ্ছে না। রাস্তার খারাপের জন্য এখন অনেক গর্ত তৈরি হয়েছে, ছিটেফোঁটাও রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। বৃষ্টির সময় তো পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।’

নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হক বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের পুরো ৬২ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে অনেক আগেই হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে জমি ও স্থাপনা সরানোর জমা না দেওয়ায় কিছু জায়গায় কাজের অগ্রগতি বাধা পেয়েছে। জমি দ্রুত হস্তান্তর হলে কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা বলেন, ‘সড়ক বিভাগের পাঠানো চিঠির কারণে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়। কিছু মালিকের অভিযোগ ও আদালত মামলার কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে। বর্তমানে ১০ শতাংশ ক্ষতিপূরণের জন্য জটিলতা সমাধান করা হয়েছে এবং অল্প কিছু ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সব সমস্যার সমাধান হবে।’

প্রকল্পের বাস্তবায়নের পরিমাণ ও ক্ষতিপূরণের চেক দেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন প্যাকেজ অনুযায়ী এই তথ্য সংগ্রহ ও জানানো হবে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos