রাজনৈতিক ঝুঁকি ও অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের ঋণমান কমাল মুডিস

রাজনৈতিক ঝুঁকি ও অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের ঋণমান কমাল মুডিস

বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান আবার কমিয়েছে মুডিস রেটিংস। সরকারের ইস্যুয়ার ও সিনিয়র আনসিকিউরড রেটিংস ‘বি১’ থেকে ‘বি২’–এ নামিয়ে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির পূর্বাভাসে পরিবর্তন এনে ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘ঋণাত্মক’ করেছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ঋণমান যাচাইকারী কোম্পানি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে মুডিস। সিঙ্গাপুর থেকে আজ সোমবার প্রকাশিত রেটিংস প্রতিবেদনে মুডিস আরও

বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান আবার কমিয়েছে মুডিস রেটিংস। সরকারের ইস্যুয়ার ও সিনিয়র আনসিকিউরড রেটিংস ‘বি১’ থেকে ‘বি২’–এ নামিয়ে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির পূর্বাভাসে পরিবর্তন এনে ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘ঋণাত্মক’ করেছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ঋণমান যাচাইকারী কোম্পানি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে মুডিস।

সিঙ্গাপুর থেকে আজ সোমবার প্রকাশিত রেটিংস প্রতিবেদনে মুডিস আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিংস ‘নট প্রাইম’ বা শ্রেষ্ঠ গুণসম্পন্ন নয় হিসেবে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

বিশ্বের প্রধান তিনটি ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের একটি মুডিস। গত ৩১ মে প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষবার বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছিল। সেবার তারা ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১-এ নামায়। এর কারণ হিসেবে মুডিস জানিয়েছিল, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি রয়েছে।

মুডিস জানিয়েছে, তাদের ঋণমানের সিদ্ধান্ত মূলত বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি বৃদ্ধি ও নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টিকে প্রতিফলিত করছে। এই বিষয়গুলো এসেছে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থেকে, যার ফলে দেশটিতে একটি সরকারের পরিবর্তন ঘটেছে। এসব বিষয় সরকারের নগদ অর্থপ্রবাহের ঝুঁকি, বহিঃস্থ দুর্বলতা ও ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে ঘাটতি পূরণে আরও বেশি স্বল্পমেয়াদি ঋণের ওপর নির্ভরশীল করে তুলবে বলে মনে করে মুডিস। এ ছাড়া সম্পদের গুণগত মানের ঝুঁকির কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থার পুঁজি ও তারল্যসংক্রান্ত দুর্বলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে রাষ্ট্রের দায়সংক্রান্ত ঝুঁকিও বেড়েছে।

মুডিস বলছে, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি ও বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা আরও বেশি ঋণ দিলেও বহিঃস্থ দুর্বলতাসংক্রান্ত ঝুঁকি আগের মতই রয়েছে। এর কারণ গত কয়েক বছর ধরেই দেশের রিজার্ভ কমছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সামাজিক ঝুঁকি বৃদ্ধি, একটি পরিষ্কার পথনির্দশকের অনুপস্থিতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং জনগোষ্ঠীভিত্তিক উত্তেজনার পুনঃআবির্ভাবের কারণে রাজনৈতিক ঝুঁকি বেড়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক করার কারণ হিসেবে মুডিস জানিয়েছে, তাদের প্রত্যাশার চেয়েও এবার কম প্রবৃদ্ধি হবে। ফলে তা দেশটির দুর্বল রাজস্ব পরিস্থিতি ও বহিঃস্থ খাতের চাপ আরও বাড়াতে পারে। এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলার কারণে পণ্য সরবরাহের সমস্যার কারণে। এর ফলে রপ্তানি ও তৈরি পোশাক খাতের সম্ভাবনা মেঘাচ্ছন্ন হয়েছে।

মুডিস বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিস্তৃত সংস্থার কর্মসূচি পরিচালনা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তা বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা রয়েছে। যদি অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরা ও উচ্চ বেকারত্ব কমানোসহ দ্রুত ফলাফল না দিতে পারে, তাহলে সংস্কারের পেছনে যে রাজনৈতিক পুঁজি রয়েছে তা দ্রুতই চলে যেতে পারে।

মুডিস আরও জানিয়েছে, ঋণমান কমানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রা (এলসি) ও বিদেশি মুদ্রার (এফসি) ঊর্ধ্বসীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলসির জন্য ঊর্ধ্বসীমা বিএ২ থেকে বিএ৩ এবং এফসির ঊর্ধ্বসীমা বি১ থেকে বি২–তে নামানো হয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা সাধারণত বিশ্বের প্রধান তিনটি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি বা ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন দেখে কোনো দেশে বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। অর্থাৎ তাদের রেটিং প্রতিবেদন বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। মুডিসের মতো প্রভাবশালী বাকি দুটো প্রতিষ্ঠান হলো ফিচ রেটিংস এবং এসঅ্যান্ডপি।

আর্থিক খাতের বিশ্লেষকেরা মনে করেন, মুডিসের মতো প্রতিষ্ঠান ঋণমান কমালে তা ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ ও বিদেশি ঋণের সুদের হার বাড়তে দিতে পারে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হতে পারে, কারণ খরচ বেশি হলে বিদেশিরা এ দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন না। সাধারণত এ ধরনের ঋণমানের প্রভাব বাণিজ্যিক ঋণের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos