রাজনৈতিক সমঝোতা চায় বৃটেন

রাজনৈতিক সমঝোতা চায় বৃটেন

বাংলাদেশের ‘ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থা’র সংস্কারে সহায়তার হাত প্রসারিত করতে চায় বৃটেন। সেই সঙ্গে তারা রাজনৈতিক সমঝোতা দেখতে চায়। এ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা সফর করেন ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক বৃটিশ প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট। সফর বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েক মাসের অশান্ত অবস্থার পর বাংলাদেশের জনগণের শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ ও জবাবদিহির জন্য একটি পথ পাওয়া প্রয়োজন। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে

বাংলাদেশের ‘ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থা’র সংস্কারে সহায়তার হাত প্রসারিত করতে চায় বৃটেন। সেই সঙ্গে তারা রাজনৈতিক সমঝোতা দেখতে চায়। এ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা সফর করেন ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক বৃটিশ প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট। সফর বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েক মাসের অশান্ত অবস্থার পর বাংলাদেশের জনগণের শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ ও জবাবদিহির জন্য একটি পথ পাওয়া প্রয়োজন। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে বৃটেন কীভাবে সর্বোত্তম সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে আমি এখানে এসেছি। কূটনৈতিক সূত্র  বলছে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সফরের অংশ হিসেবে ক্যাথরিন এই প্রথম বাংলাদেশ সফর করেন। দু’দিনের সফরের সমাপনী দিনে রোববার তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই দিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়। তাছাড়া সফরকালে সরকারের বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় করেন। সর্বত্রই তিনি ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’র বার্তা স্পষ্ট করেছেন। বৃটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় পূর্ণ সহায়তা দেবে বৃটেন: এদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় তার সরকার ঢাকাকে পূর্ণ সহায়তা দেবে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা’য় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি একথা বলেন। 
ড. ইউনূস তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, অলিগার্ক ও আমলাদের পাচার করা অর্থ ফেরত আনা অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সামপ্রতিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে বছরে ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশে পাচার হয়েছে। বৈঠকে অধ্যাপক ড. ইউনূস দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে তার সরকারের সংস্কার উদ্যোগের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং পূর্ববর্তী শাসনামলে চর্চা করা ব্যাপক ভোট কারচুপি থেকে বিরত থাকা এই সংস্কারের লক্ষ্য। পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের সংস্কার উদ্যোগগুলোকে সমর্থন করে উল্লেখ করে ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেন, বৃটেন নির্বাচনী, বিচার বিভাগীয় ও সাংবিধানিক সংস্কারের মূল দিকগুলোতে প্রাণবন্ত বিতর্ক দেখতে চায়। বৃটিশ মন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থী, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সেবা ও সহায়তা প্রদানের জন্য আরও ১০.৩ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদানের ঘোষণা দেন। ড. ইউনূস মিয়ানমারের সহিংসতা-জর্জরিত রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ‘জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠায় তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন যাতে তাদের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে না হয় এবং দাতব্য সংস্থা এবং সাহায্য গোষ্ঠীগুলো নির্বিঘ্নে বাস্তুচ্যুত মানুষের দোরগোড়ায় খাদ্য ও সহায়তা দিতে পারে। বৈঠকে তারা ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা, সংখ্যালঘুদের অধিকার, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সামপ্রতিক ৪০ মেগাওয়াট জ্বালানি চুক্তি নিয়েও আলোচনা করেন। ড. ইউনূস বলেন, তার সরকার জলবিদ্যুৎ সমৃদ্ধ নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার বিদ্যুৎ গ্রিড তৈরিকে পুরোপুরি সমর্থন করেছে। তিনি বলেন, হিমালয়ের পাদদেশের দুই দেশ থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি আমদানি করতে পারলে বাংলাদেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। বৈঠকে ঢাকায় বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত ছাত্র ও অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি মেডিকেল টিম চলতি মাসে দেশে এসেছে। তিনি বলেন, ‘তারা দিনে তিনটি অস্ত্রোপচার করছেন।’

অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা 
ওদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৃটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্টের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, তারা আমাদের সহযোগিতা করতে আগ্রহী। তারা জানতে চেয়েছেন যে কীভাবে আমাদের সহায়তা করতে পারেন। আমিও তাদের খুব পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি, আমাদের এখানে কারও কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। আমরা আসলেও একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে দিয়ে সরে যেতে চাই। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের আগ্রহ আছে বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের ভিসা প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছে মন্ত্রণালয়। এখন সেখানে যাওয়াটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এ ছাড়া, যুক্তরাজ্যে পাচার করা অর্থ ফেরানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। রোহিঙ্গাদের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সমর্থন কামনা করেন। বলেন, মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত মানুষের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের মধ্যেই এই সংকটের একমাত্র সমাধান রয়েছে।

পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনাসহ সরকারকে পূর্ণ সহায়তা করবে বৃটেন: নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে আবারো পূর্ণ সহায়তার কথা জানিয়েছে বৃটেন। দেশটির ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট জানিয়েছেন, তার সরকার কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাসহ অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশকে পূর্ণ সহায়তা দেবে। বৈঠকে প্রফেসর ইউনূস দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচন কমিশন ঠিক করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং পূর্ববর্তী শাসনামলের ব্যাপক ভোট কারচুপির যে চর্চা সেটি দূর করাই এই সংস্কারের লক্ষ্য। পশ্চিমা দেশগুলো এসব সংস্কারকে সমর্থন করে জানিয়ে ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, বিচার বিভাগ এবং সাংবিধানিক সংস্কারের মূল দিকগুলোর ওপর প্রাণবন্ত আলোচনা দেখতে চায় বৃটেন।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos