নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি :করোনাকালীন অর্থনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ

নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি :করোনাকালীন অর্থনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্পকারখানা, অফিস, আদালত ব্যাংক, বিমা খোলা হলেও মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়ে আছে শ্রমবাজার। প্রতিদিনই নতুন করে কাজ হারাচ্ছেন মানুষ। ফলে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত বেকার সদস্যর সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন বেকারের মিছিল। শুধু তাই নয়, স্থানীয় বেকার বোঝার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীর চাপ। করোনা আতঙ্ক এখনো সবাইকে

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্পকারখানা, অফিস, আদালত ব্যাংক, বিমা খোলা হলেও মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়ে আছে শ্রমবাজার। প্রতিদিনই নতুন করে কাজ হারাচ্ছেন মানুষ। ফলে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত বেকার সদস্যর সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন বেকারের মিছিল। শুধু তাই নয়, স্থানীয় বেকার বোঝার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীর চাপ। করোনা আতঙ্ক এখনো সবাইকে তাড়া করে ফিরছে। একদিকে জীবন আশঙ্কা, অন্যদিকে জীবিকার তাগিদ। কোনদিকে যাবে মানুষ, ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। পুরোনো কর্মস্থলে স্বাভাবিকতা ফিরে আসেনি বলে সেখানে যেতে পারছেন না অনেকে। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অগণিত মানুষ। এখানেও কাজের তেমন সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। ফলে এই সময়ে অর্থনীতিতে অন্যসব সমস্যা ছাপিয়ে বেকারত্বই প্রকট আকার ধারণ করেছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিপিআরসি ও বিআইজিডির জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়, তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) অন্তত ১৭ শতাংশ মানুষ নতুন করে বেকারের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। আর নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন ২১ শতাংশ মানুষ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরো চরম আকার ধারণ করবে—বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বেকারত্বের সঙ্গে বাড়বে সামাজিক সংকটও। ইতিমধ্যে দেশে কয়েক লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। সবার জীবন-জীবিকার যুদ্ধে পরাজিত লাখ লাখ মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা মহানগর ছেড়ে পরিবারসহ স্ব-স্ব গ্রামে ফিরে গেছে। সাম্প্রতিক বন্যার প্রকোপে গ্রামীণ অর্থনীতিতে চলছে নানা সংকট। কৃষি ক্ষেত্রে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া কবে, কীভাবে চালু হবে—তা বলা যাচ্ছে না। গ্রামীণ জনপদে বন্যার ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে পানি নেমে যাওয়ার পর।

বেকারত্ব আমাদের দেশে দীর্ঘমেয়াদি একটি সমস্যা। এখানে প্রতি বছরই শিক্ষিত ও অশিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকার তালিকায় উঠে আসছে। এসবের মধ্যে গত কয়েক বছরে আমাদের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তাকে অর্থনীতির ভাষায় ‘জবলেস গ্রোথ ইকোনমি’ অভিহিত করা হয়। এই প্রবৃদ্ধিতে কাজের সুযোগ খুব একটা বাড়েনি। অর্থাত্ যেভাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঠিক সেভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। ফলে দিন দিন ‘জবলেস গ্রোথ ইকোনমি’ যেমন বেড়েছে তেমনি সামাজিক বৈষম্যও প্রকট থেকে প্রকটতর হয়েছে। দিনে দিনে বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আবার হানা দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯। যা দেশে বেকারের সংখ্যা এক লাফে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তরুণ বেকারদের কর্মসংস্থানের নতুন কোনো সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না।

সবাই এখন করোনা বিদায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। করোনা চলে গেলে অর্থনৈতিক কর্মতত্পরতা এমনিতেই দ্রুত বাড়তে থাকবে। তখন বিনিয়োগও হবে। এর মাধ্যমে নতুন চাকরির সংস্থানও হবে। কিন্তু সেই প্রতীক্ষিত সময়ের জন্য অনির্দিষ্ট সময় ধরে অপেক্ষা না করে কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণটা জরুরি হয়ে উঠেছে এ মুহূর্তে। এর মধ্যেই করোনাকে উপেক্ষা করে মানুষ তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরতে চাইছেন। মনোবলকে শক্ত করছেন তারা জীবনের প্রয়োজনে, জীবিকার তাগিদে। করোনা ভাইরাসের কারণে নতুন করে বড় রকমের বিপর্যয় না ঘটলে এই ভীতি দূর হওয়াটা আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হয়ে ধরা দিয়েছে। তাই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসংস্থান আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে এবং নতুন করে কাজের ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করতে করোনা নিয়ে ভীষণ সতর্ক থাকতে হবে। যাতে নতুন করে কোনো মহাবিপর্যয় না ঘটে।

এ অবস্থায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। সরকার এ লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাই বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে খামখেয়ালি, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ইত্যাদিকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের কাজগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। স্রেফ সরকারি উদ্যোগ, পদক্ষেপ, ব্যবস্থাপনার দিকে তাকিয়ে না থেকে বেসরকারিভাবে দক্ষতা, মেধা, অভিজ্ঞতা এবং মূলধনের যথোপযুক্ত ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে। সমন্বয়হীনতা এ ধরনের উদ্যোগে বড়ো ধরনের বাধার সৃষ্টি করে সাধারণত। এ বিষয়টিও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

Staff Reporter
ADMINISTRATOR
PROFILE

Posts Carousel

Latest Posts

Top Authors

Most Commented

Featured Videos